ইউক্রেনে অভিযান শুরুর আগে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, সেখানে তারচেয়ে ধীরগতিতে চলছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখা ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ও দেশটির নিরাপত্তা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ভিক্তর জোলোতভ সোমবার ন্যাশনাল গার্ডের ওয়েবসাইটে এই স্বীকারোক্তি দেন।
তবে রুশ সেনাদের এই ধীরগতির জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেছেন জোলোতভ; বলেছেন, ইউক্রেনের সেনারা রুশ হামলা থেকে বাঁচতে বেসামরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
সোমবার ন্যাশনাল গার্ডের ওয়েবসাইটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ট এই কর্মকর্তা ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযান নিয়ে মন্তব্য করদে গিয়ে লেখেন, ‘আমি এটা স্বীকার করব যে, আমরা যেমন ভেবেছিলাম, তত দ্রুতগতিতে তারা (রুশ সেনাবাহিনী) এগোতে পারছে না; তার প্রধান কারণ, ইউক্রেনের সেনারা বেসামরিক লোকজনের পেছনে লুকিয়েছে এবং তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।’
‘তবে আমরা ধাপে ধাপে ঠিকই আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব এবং বিজয় আমাদেরই হবে।’
মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরেই মূলত দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ২০০৮ সালে কিয়েভ এই আবেদন করার পর থেকেই সম্পর্ক দু’দেশের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে।
এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে দ্বন্দ্বের তীব্রতা। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পুতিন ও জোলোতভ উভয়ই সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এজেন্ট ছিলেন। কেজিবির এজেন্ট থাকাকালে জলোতভের দায়িত্ব ছিল কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পুতিনের পাশাপাশি জোলোতভও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে যোগ দেন।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর থেকে পুতিনের পাশে আছেন জোলোতভ। দীর্ঘ ১৩ বছর পুতিনের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর প্রধান ছিলেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে রুশ সামরিক বাহিনীর বিশেষ শাখা ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান হন তিনি। এই বাহিনী সরাসরি পুতিনের কাছে জবাবদিহিতা করে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর তিন দিন আগে, ২১ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক ডেকেছিলেন পুতিন। সেখানে জোলোতভই প্রথম ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বীকৃতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য আরও এগিয়ে যাওয়া উচিত হবে আমাদের,’— তার ওই কথাই ছিল বৈঠকের শেষ কথা।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অবশ্য রাশিয়ার এই সামরিক অভিযানকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন হিসেবেই বিবেচনা করছে; এবং পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, মস্কো বরাবরই ইউক্রেনের প্রতিরোধকে খাটো করে দেখেছিল।
সূত্র: রয়টার্স