চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। বাড়ির ঠিকানা ঠিকমতো বলতে পারছেন না। বাড়িতে ফিরতে চান? প্রশ্ন করতেই চোখের কোণে পানি। মাথা নাড়িয়ে বললেন, ফিরতে চাই না। অসহায় এই বৃদ্ধাকে সাতক্ষীরার বাইপাস সড়কে ফেলে গিয়েছেন কেউ।
বর্তমানে শহরের পরিত্যক্ত ভবন কামালনগর ক্লাবের এক কোণে আশ্রিত রয়েছেন বৃদ্ধ বানু। বয়স আনুমানিক ৬৫-৭০ বছর। স্থানীয়রা খাবার দিচ্ছেন, করছেন সেবা। পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে আকুতি জানিয়েছেন তারা।
সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দীন জানান, ১২-১৩ দিন আগে এই বৃদ্ধাকে কেউ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়। এরপর ৬-৭ দিন রাস্তার পাশে ব্রিজের নিচে পড়েছিল। ঘটনাটি এলাকার নারীদের দৃষ্টিতে আসে। তারা বৃদ্ধাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে কামালনগর ক্লাবে নিয়ে আসে। ঘটনাটি আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি।
তিনি আরও জানান, বাড়ির ঠিকানা ঠিকমতো দিতে পারছেন না এই বৃদ্ধা। একেক সময় একেক কথা বলছেন। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়। তবে কথাবার্তা শুনে মনে হয় তার বাড়ি ঢাকার দিকে কোথাও হবে।
কামালনগর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংবাদমাধ্যমে দেখে যদি কেউ বৃদ্ধাকে চিনতে পারেন তবে তার পরিবারকে খবরটি পৌঁছে দিন। তারা যেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। পরিত্যক্ত ভবনটিতে খুব কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।
এদিকে ওই নারীর পরিচয় ও বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তার নাম বানু বিবি, স্বামী নেই। বাবার নাম আলেক মিয়া। থানা বিষ্ণুপুর। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তার। ছেলেদের নাম শাহাজাহান ও চঞ্চল। ছেলেরাও ঢাকা শহরে থাকে। সাতক্ষীরায় আসলেন কিভাবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ফেলে রেখে গেছে। বাড়িতে শুধু মারে। বাড়িতে গেলে মারধর করবে।
বৃদ্ধাকে সেবা করা করিম রাজমিস্ত্রির স্ত্রী রুপালী খাতুন জানান, এলাকাল নারীরা মিলে তার দেখভাল করছি। খাবার দিচ্ছি, গোসল করাচ্ছি। একজন থাকবার জন্য খাট দিয়েছে, একজন টেবিল দিয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কাদির বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা ওই বৃদ্ধার ছবি নিয়ে সব থানায় পাঠিয়েছে। এখনো কোনো রিপ্লাই পাইনি। এখন পরিবারটিকে খুঁজে পেলেই ভালো।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহিদুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরায় ভবঘুরেদের কোনো শেল্টার হোম নেই। এছাড়া এ বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই।
জেলা সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে বৃদ্ধাকে আমাদের বৃদ্ধ-নিবাসে রাখা যাবে।