পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ভারতের আধার কার্ডের চেয়েও শক্তিশালী নাগরিক ডাটাবেজ তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মিলনায়তনে জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এ কাজটার মাধ্যমে জাতীয় অ্যাকর্ড তৈরি করা যাবে। যেখান থেকে আমরা যেকোন ব্যক্তি, যেকোন সংস্থা, যেকোন সময় ওয়ান ক্লিক, ওয়ান আন্সার, ওয়ান রিকোয়ার পেতে পারি। অন্যান্য সমান্তরাল বা আধা সমান্তরাল স্পেশালাইজড যেসব সংস্থা আছে প্রয়োজন হলে তারাও এ তথ্য ব্যবহার করতে পারবে। এনপিআর রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনেই করতে হবে। এ কাজটা করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ প্রয়োজন। অনেক টেকনিক্যাল বিষয় প্রয়োজন, যেগুলো আমাদের কাছে না থাকলেও বিশ্বে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করবো, আমরা ১০ বছর পরপর যেই শুমারিগুলো করি, যেটা নিয়ে আমরা সমস্যার মধ্যে আছি। নানা কারণে এবার জনশুমারিটা সময় মতো করতে পারলাম না। প্রধান কারণ হচ্ছে কোভিডজনিত কারণে এটা করতে পারলাম না, তারপর অন্যান্য কিছু বিষয় চলে এসেছে। আমি আশা করি এনপিআর হয়ে গেলে এসমস্ত কাজ আর করতে হবে না। আমাদের চলমান একটি সিস্টেম থাকবে সার্বক্ষণিক। যেটা থেকে শুমারিসহ সব সার্ভের তথ্য আপডেট হতে থাকবে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘এনপিআর আমাদের ব্যক্তি সমাজে দারুণ ভূমিকা রাখবে। ভারতীয় নাগরিকের সব তথ্য থাকে আধার কার্ডে। ভারতের আধার কার্ডের চেয়েও শক্তিশালী নাগরিক ডাটাবেজ তৈরি করতে যাচ্ছে বিবিএস। তবে ভারত যেহেতু আধার কার্ড নাম দিয়েছে আমরা অন্য একটা নাম দেবো। বর্তমানে পলিসি লেবেলে এনপিআরের কাজ চলছে।’
বিবিএস জানায়, এনপিআর এ ৩৩ ধরনের তথ্য থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো— ব্যক্তির নাম, এনআইডি-পাসপোর্ট-জন্ম নিবন্ধন-মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, জরুরি নম্বর, পিতা-মাতার নাম, স্ত্রী/স্বামীর নাম, বসতবাড়ি, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মস্থান, জাতীয়তা, ধর্ম, ব্লাড গ্রুপ, রেসিডেন্স স্ট্যাটাস, বর্তমান ঠিকানা, ঘরের ধরন, পানির উৎস/স্যানিটেশন/আলোর উৎস, স্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, নাগরিকত্ব, কান্ট্রি মাইগ্রেশন, করোনিক ডিজিস, জেনেটিক ডিজিস প্রভৃতি। একজন নাগরিকের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সব ধরনের তথ্য থাকবে। এ তথ্য ভোটারের জন্য নির্বাচন কমিশনও ব্যবহার করতে পারবে। মানুষের মৃত্যু হলেও হাজার বছর তার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
বিবিএসের সেন্সিং উইংয়ের সাবেক পরিচালক ও এনপিআর এর পরামর্শক ড. মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন কর্মশালায় বলেন, ভারতের আধার কার্ডের থেকেও শক্তিশালী হবে এনপিআর। মানুষ মারা যাবে, কিন্তু ডাটা সংগ্রহে থাকবে হাজার বছর। একটি শিশু জন্মের পরেই এনপিআর ডাটাবেজে চলে আসবে। নাগরিকের যখন তথ্য দরকার হবে তখন এক ক্লিকেই সব তথ্য বের হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, এনপিআর থেকে পাওয়া যাবে দেশের নাগরিকের সব তথ্য। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত রেজিস্ট্রার (ডাটাবেইজ) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ডাটাবেজ তৈরির জন্য ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার’ সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে সংস্থাটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেওয়ার পরেই বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বিবিএস।