ঢাকা ওয়াসায় আজিজ-মনির চক্রের বিএনপির ব্যানারে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড?
আরমান বাদল :
ঢাকা ওয়াসায় বিএনপি পরিচয়ে তথাকথিত জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর স্বঘোষিত সভাপতি আজিজুল আলম খান ও সেক্রেটারী মনির হোসেন পাটোয়ারী চক্র রীতিমত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে। যাতে বিএনপি’র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য হচ্ছে।
উল্লেখ্য ঢাকা ওয়াসা জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর কমিটি নিয়ে বিভেদের জেরে সুপ্রিম কোর্টে একটি রীট মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ কমিটির পদ দাবি করতে পারেন না। আজিজুল আলম খান ও সেক্রেটারী মনির হোসেন পাটোয়ারী আওয়ামী প্রেতাত্মা খ্যাত তাকসিম এ খানের আশির্বাদপুষ্ট ও সুবিধাভোগী ছিলেন।
বিগত আওয়ামী শাসনামলে আজিজুল আলম খান নিজ জেলা সিলেটে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলেন। তার ২য় স্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী এবং আওয়ামী লীগে পদধারী ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নানের দলীয় ম্যান হিসেবে লিখিত সুপারিশে ঢাকা ওয়াসায় সুবিধাজনক স্থানে বদলি হয়েছেন। বিগত ১৬ বছরে বিএনপি’র কোন কার্যক্রমের সাথে তারা সক্রিয় ছিলেন না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উচ্চ আদালতের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে নিজেদের সভাপতি সেক্রেটারী দাবি করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সূত্রমতে সম্প্রতি সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি আনিছুজ্জামান খান শাহীন কে দশ তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার হুমকি দুই জন উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) লাথি ঘুষি মেরে টেনে হিচড়ে ওয়াসা ভবন থেকে বের করে দেয়া এবং অতি সম্প্রতি দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন এর দু জন সাংবাদিককে ওয়াসা ভবনে ঢেকে নিয়ে দৈহিক নির্যাতন,ক্যামেরা মোবাইল মানিব্যাগ ও গাড়ি লুটের অপচেষ্টা করার মত ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে পলাতক এমডি তাকসিম এ খানের প্রেতাত্মা আজিজুল আলম খান,মনির হোসেন পাটোয়ারী বজলুর রহমান ও মাহবুব হোসেন গং এতে ঢাকা ওয়াসার সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রকৃত বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে ১৭ নভেম্বর-২০২৪ তারিখে ঢাকা ওয়াসার দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে লাথি ঘুষি মেরে টেনে হিচড়ে ওয়াসা ভবন থেকে জোর পূর্বক বের করে দিয়েছিলেন আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী । ওই দুজন ডিএমডি হলেন- একে এম সহিদ উদ্দিন (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) ও মো. আকতারুজ্জামান (ফিন্যান্স)। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী’র ভয়ে উপরোক্ত দু’জন কর্মকর্তা আইনের আশ্রয় নেয়ারও সাহস পায়নি। যদিও এবিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। কিন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।
এরপূর্বে উপসচিব শহীদুল ইসলামকে ওয়াসা ভবন থেকে জোর করে বের করে দিয়েছেন তথাকথিত বিএনপি’র ঠিকাদার আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারী চক্র।
অন্যদিকে ২৩ অক্টোবর-২০২৪ তারিখে ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি আনিছুজ্জামান খান শাহীন ওয়াসা ভবনে গেলে আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়াররীর নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তাকে ভবন থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। অন্যথায় তাকে ১০ তলার ওপর থেকে ফেলে দেয়ার হুমকি দেন। এবিষয়ে আনিছুজ্জামান খান শাহীন ২৬ অক্টোবর-২০২৪ তারিখে তেজগাঁও থানা ও তেজগাঁও আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সর্বশেষ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ১ ডিসেম্বর-২০২৪ তারিখে। ওইদিন ঢাকা প্রতিদিন এর স্টাফ রিপোর্টার মো: সোহাগ ও মো: ঈস্রাফিলকে ওয়াসা ভবনে ঢেকে নিয়ে আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারী চক্র পোষা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের নির্যাতন করেন।
তাদের গাড়ি,ক্যামেরা,মোবাইল,মানিব্যাগ লুট করার অপচেষ্টা করেন এবং তেজগাঁও থানার একজন এসআই’র সহযোগিতায় পুলিশে সোপর্দ করার নাটক করেন। অনলাইনে সম্প্রচারিত প্রায় ২৫ মিনিটের একটি ভিডিও চিত্রে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রমান পাওয়া যায়। এবিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে।
আউটসোর্সিং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারী চক্রের বিরুদ্ধে।তাদের সাথে নিয়োগ বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের ভাগ্নি জামাতা ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা তানবীর আহম্মেদ সিদ্দিকী। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা ওয়াসার এমডি ফজলুর রহমানের আশির্বাদে তারা ওয়াসাকে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে।
১/০৯/২৪ ইং তারিখে ৩০ থেকে ৪০ জন এবং নভেম্বর ২৪ ইং মাসের মাঝামাঝি সময় ৯৩ জন আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘুষের টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তড়িঘড়ি করে পরবর্তী ধাপে নিয়োগ পাওয়া ৯৩ জনকে কিছুদিন অফিস করার পর ২৫/১১/২৪ ইং হতে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে নিষেধ করা হয়। ফোন কলের মাধ্যমে তাদেরকে জানানো হয় তাদের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু প্রথম ধাপের ৩০-৪০ জন এখনো বহাল তবিয়তে জোনাল অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন।
নতুন নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায় জনপ্রতি ৮-১০ লাখ টাকার বিনিময়ে আউটসোর্স কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মনির ঘুষের টাকায় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজিজ একজন রাজস্ব পরিদর্শক হলেও তার জীবনযাত্রা মন্ত্রী-এমপিদের চেয়েও বিলাসী। রাজধানীর মন্ত্রী পাড়া নামে খ্যাত বেইলী রোডে আলিশান বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করেন আজিজ।ক্যানটনমেন্টে ২য় স্ত্রীর ফ্লাট। সিলেটে বিশাল বাগানবাড়ি রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও জমি বিলাসবহুল গাড়ি এবং সুইজারল্যান্ড থাইল্যান্ড সিংগাপুর সহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত ভ্রমণের অভিযোগ রয়েছে ৩৫ হাজার টাকা বেতনের এই তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক মনির পাটোয়ারী ৩৫ হাজার টাকা বেতনের একজন পাম্প চালক। রাজনৈতিক প্রভাবে রাজস্ব পরিদর্শকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তার রয়েছে ঢাকার মিরপুরে ৬ তলা বিলাস বহুল বাড়ি (বাড়ি নং ৩ রোড ৭ ব্লক এফ সেকশন ২ মিরপুর ঢাকা)। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নির্মানাধীন ৬ তলা ভবনসহ রয়েছে বিপুল সম্পদ। তার আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠজনদের বিভিন্ন পদে চাকরি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কথিত নেতারা তা মানছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন, আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারী চক্র স্বঘোষিত নেতা ।
তাছাড়া জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(৩১৮৫) ঢাকা ওয়াসার সিবিএ নয়। তারা কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়। তাদের কমিটির বৈধ কাগজপত্র নেই। এরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দাবি-দাওয়াকে উপেক্ষা করছেন।
নিজেদের স্বার্থ হাসিলের মাধ্যমে লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছেন। আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারী চক্র-কে দলের সুনাম রক্ষার স্বার্থে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ওয়াসার বিএনপি মনষ্ক কর্মচারীগণ
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারীর মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।