সিএনএমঃ
ফরিদপুরের বোয়ালমারির চাঞ্চল্যকর “যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা” শীর্ষক ঘটনার প্রধান সহযোগী আসামি হাচান’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০,ফরিদপুর।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) আনুমানিক রাত ১৯:৩০ ঘটিকায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন বাখুন্ডা রেলস্টেশন এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে।
উক্ত অভিযানে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার মামলা নং-০৫/২০০, তারিখ-০৫/১০/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১(ক)/৩০। যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি হত্যাকারী মোঃ হাচান শেখ(২৮), পিতা- মোঃ ইউনুচ শেখ, স্থায়ী ঠিকানা- জয়পাশা, থানা- বোয়ালমারী, জেলা- ফরিদপুর’কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ হাচান শেখ তার মামাতো ভাই উক্ত মামলার প্রধান আসামি বক্কার শেখের সাথে মিলিত হয়ে এই হত্যাকান্ডটি ঘটায়। আসামী বক্কর শেখ বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে যৌতুকের জন্য ভিকটিম জিয়াসমিনকে বিভিন্নভাবে শারিরীক নির্যাতন ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। অতঃপর গত ২২/০২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে আসামি বক্কার শেখ ভিকটিম জিয়াসমিনকে মারাত্বকভাবে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম করে। যার ফলে জিয়াসমিন আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ১৫ দিন যাবৎ চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ভিকটিম জিয়াসমিন সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পর আসামি বক্কার শেখ ও হাচানসহ তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মিলে ভিকটিম জিয়াসমিনের হাত-পা বেঁধে ঘরের ভিতরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে এবং তার মাথার চুল কেটে ফেলে। পরবর্তীতে আসামিরা ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে বলে যে, সৌদিআরবে যাওয়ার জন্য বক্কারকে যৌতুক হিসেবে ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকা দিতে হবে। অতঃপর গত ০১/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ মাঝ রাত আনুমানিক ০১:০০ ঘটিকায় উক্ত এলাকার আশপাশের লোকজন ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে জানায় যে, বক্কার শেখ ও হাচানসহ তাদের পরিবারের লোকজন মিলে যৌতুকের দাবিতে ভিকটিম জিয়াসমিনকে বেধরক মারধর করছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির পর ভিকটিমের বাবা ও তার পরিবারের কয়েজনকে নিয়ে আনুমানিক রাত ০৩:৩০ ঘটিকায় আসামি বক্কার শেখ এর বাড়ীতে পৌছালে সেখানে গিয়ে দেখতে পায় যে উক্ত বাড়ীতে কেউ নেই। অতঃপর তারা স্থানীয় ও আশপাশের কয়েকজন লোকসহ ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় ভিকটিম জিয়াসমিন এর শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখমের চিহ্ন ও গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় ভিকটিম জিয়াসমিনের মৃত দেহের অর্ধেক শরীর চৌকির নিচে এবং অর্ধেক শরীর চৌকির বাহিরে পড়ে আছে। পরবর্তীতে পুলিশকে সংবাদ দিলে বোয়ালমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য মিডফোর্ড স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
হত্যাকান্ডের পর মৃত জিয়াসমিনের পিতা আজিজার মোল্যা (৫১) বাদি হয়ে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানায় আসামি বক্কার শেখ ও তার পরিবারের আরো ০৫ জনের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে হত্যার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।
উক্ত যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে স্ত্রীকে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ০৮/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ উক্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামি বক্কার শেখ’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে আসামি বক্কার শেখের দেয়া তথ্যমতে উক্ত হত্যা মামলার প্রধান সহযোগী আসামি হাচান’কে গ্রেফতার করে।