সিএনএমঃ
রাজধানী সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী রাতুল। আর কিছু দিন পর বসবনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। কিন্তু কলেজ জীবন পার করার আগেই বনে গেছেন প্রায় শত কোটি টাকার মালিক। কোটি টাকার মালিক তাই চলাফেরাতেও তার আভিজাত্যের ছোঁয়া।
রয়েছে সিভিক প্রাইভেটকার, প্রিমিও গাড়ি। আর-১৫ মোটরবাইক রয়েছে ডজনের বেশি। আইফোনের সর্বশেষ মডেলও তার হাতে। গ্রামের বাড়িতে বাবা-ভাইকে কিনে দিয়েছেন চারটি ভেকু।
অবৈধ পথে শতকোটি কামানো রাতুলসহ তিনজনকে গত মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপরই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। গ্রেফতারকৃত অন্য দুইজন হলেন- মুন্না ও ইয়াসিন। তাদের বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ডিএমপির ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃত তিনজনের বাইরে আরো দুইজন রয়েছে। এরা হলো নবাব ও মুকুল। এদের ধরতে অভিযান অব্যাহত।
ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, পাবনার আমিনপুর থানার বাঁশতলা গ্রামের আজিবুর রহমানের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রাতুল। সে মেলবেট নামক একটি অনলাইন জুয়ার সাইটের বাংলাদেশি মূল এজেন্ট। এছাড়া আরো কয়েকটি জুয়ার সাইট পরিচালনা করে। মুহুরি বাবার ছেলে হলেও সে ৫০ লাখ টাকা দামের প্রাইভেটকারে চলাফেরা করে। তার আছে প্রায় ৫ লাখ টাকা দামের তিনটি ইয়ামাহা আর-১৫ মোটরবাইক।
এছাড়া কয়েক কোটি টাকার পার্টনারশিপে রাতুলের একটা বিদেশি পণ্যের শোরুমের কাজ চলছে। সে থাকে ধানমন্ডির এক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। তার ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোনের একেকটির মূল্য ২ লাখ টাকারও বেশি।
ডিবি পুলিশ জানায়, রাতুল সম্প্রতি আজারবাইজানের একটা জুয়া কোম্পানির ২০০ কোটি টাকা মূল্যের এজেন্সি ক্রয়ের আলোচনা করছে এবং পরীক্ষা শেষ করে আজারবাইজান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এতকিছু তার জুয়ার সাইট পরিচালনা করে। রাতুল তার বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত। তার বাবার কয়েকটি অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহযোগীদের নিয়ে এ দীর্ঘদিন ধরে এ চক্র গড়ে তোলে রাতুল। অনলাইন গেমের মাধ্যমে অন্তত কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। ডলার বিজনেসের মাধ্যমে এ টাকা বিদেশে পাচারও করেছে।
রাতুলের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব কয়েকজন জানান, দ্বিগুণ লাভের প্রলোভনে তারা কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে কিছুই পাননি। যেহেতু কাজটি অন্যায় সেহেতু তারা থানায় অভিযোগও করতে পারছেন না। এ নিয়ে পরিবারেও অশান্তি চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জুয়াড়ি জানান, বছর পাঁচেক আগেও দেশে অনলাইন জুয়া ছিল মুষ্টিমেয় ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ জুয়ায় বাজিতে বুঁদ হয়ে থাকে। ফুটপাতের চা-দোকানি থেকে শুরু করে সেলুন দোকানদার, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয়কর্মী থেকে শুরু করে ভবঘুরে, বাস-ট্রাকের চালক-হেলপার, সিএনজিচালক,নির্মাণ শ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিনমজুরের মতো নিম্ন আয়ের মানুষও অনলাইনে বাজি ধরতে ব্যস্ত। ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজি ধরে তারা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তো রয়েছেই, স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও অনলাইন জুয়ায় বেশ পটু।
ডিএমপির ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ফিলিপাইন, ম্যাকাও, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, আজারবাইজান, বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়াসহ নানা থেকে। এসব সাইটে বাংলাদেশিদের ফাঁদে ফেলছে দেশীয় এজেন্টরা।