সিএনএমঃ
অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ সাদ্দাম হোসেন মিজি, সহিদুল ইসলাম আলমগীর ও মোঃ আলমগীর খান।
গত শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২২) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি-সাইবারের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত ৫ টি মোবাইল ফোন ও ৭ টি সিম কার্ড উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ডিএমপি নিউজকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বেটিং সাইট ও মোবাইল অ্যাপস পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদুটির গঠন প্রনালীতে প্রথমে রয়েছে সুপার এডমিন, তারপর পর্যায়ক্রমে ম্যানেজার, ভিআইপি এজেন্ট এবং সর্বশেষে ইউজার। মূলত সুপার এডমিন ফ্রান্স থেকে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য বেশ কিছু ম্যানেজার নিয়োগ করা আছে। সংশ্লিষ্ট ম্যানেজাররা কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে সেখানে একজন এজেন্টকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে। এজেন্টরা মূলত ইউজার সংগ্রহে সহায়তা ও বিভিন্ন সমস্যা হলে সরাসরি ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে সমাধানের কাজ করে। এজেন্টগণ সদস্য সংগ্রহ করে তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং তথা পিরামিড সিস্টেমে কমিশন পেয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এজেন্টরা ২% থেকে ১০% হারে রেফারেল কমিশন পেতো। তাছাড়াও এজেন্টরা একজন নতুন গ্রাহকের একাউন্ট খুলতে ৩২০০ টাকা নিতো। নতুন গ্রাহক একাউন্ট খোলার পর তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ডিপোজিট বা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হতো। তিন দিন থেকে ৪৫ দিনের বিনিয়োগে ২.৭% থেকে ৩.১% হারে প্রতিদিন মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। বেশি মুনাফায় আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহক বা ইউজাররা বিনিয়োগ করতো। নতুন সদস্যদের ৩ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার ডিপোটিজট বা বিনিয়োগে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৭৭৭ টাকা পর্যন্ত আপলাইন গ্রাহককে কমিশনের অফার করতো। তাছাড়াও নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য রেফারেল কারীকে ৩৬০০ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের অফার করতো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত সাদ্দাম হোসেন এজেন্ট এবং সহিদুল ও আলমগীর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। গ্রেফতারকৃত সাদ্দাম বিভিন্ন এলাকায় থেকে ইউজার সংগ্রহ করে মোবাইল অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ডিপোজিট করতে সহায়তা করতো। বিনিময়ে তিনি মোটা অংকের একটি কমিশন পেতেন। ডিপোজিটকৃত টাকা ডিজিটাল হুন্ডির সহায়তায় দেশের বাহিরে পাচার হয়ে যেতো। যার প্রভাব পড়ে দেশের সামগ্রিক রেমিটেন্স খাতের উপর। তারা নিজেদের সাথে অভ্যন্তরীন কথা বার্তা ও যোগাযোগের জন্য P.S.G.MD SADDAM mizi নামক প্রাইভেট টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করতো।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেন ও লেনদেনকৃত টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়ার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে।
গ্রেফতারকৃতদের খিলক্ষেত থানায় রুজুকৃত মামলায় ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, পিপিএম এর দিক নির্দেশনায়, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান, বিপিএম-সেবা এর তত্ত্বাবধানে অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ও সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানার নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।