দস্যুতা মামলায় গত ২৩ মার্চ জেলে যান হত্যা ও অস্ত্রসহ ১৩ মামলার আসামি রাসেল হোসেন ওরফে কাটা রাসেল (৩১)। জেলে থাকতেই সাত বছর আগে পছন্দ করে বিয়ে করা স্ত্রী লাবণ্য সিদ্দিকা সাথী (২৬) তাকে তালাক দেন। পরে সাথী বিয়ে করেন আসামি রাসেল হোসেনরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাকিব হোসেনকে (২৫)। জেলে থেকেই খবরটি পান রাসেল। নিমিষেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হয় রাকিব।
গত ৩১ মে জামিনে ছাড়া পান রাসেল। জেল বেরিয়েই রাকিবকে খুঁজতে শুরু করেন। ১ জুন কৌশলে রাকিবকে ডেকে নিয়ে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যান তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় উপস্থিত লোকজন আহত রাকিবকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৪ জুন) ভোরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল হোসেন ওরফে কাটা রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এসব তথ্য জানিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর বলেন, সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করায় জেল থেকে বেরিয়েই বন্ধুকে হত্যার ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে রাসেল হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মুক্তা ধর বলেন, গত ১ জুন দুপুর ১২টার দিকে নাটোর রেলওয়ে স্টেশনের তিন নম্বর প্লাটফর্মের ওভার ব্রিজের ওপর রাকিবকে ছুরিকাঘাত করেন রাসেল। চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেপ্তার রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাত বছর আগে নিজেদের পছন্দে চক বৌদ্ধনাথপুর এলাকার লাবণ্য সিদ্দিকা সাথীর (২৬) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে রেদোয়ান আহমেদ রোজ (৫) নামে একটি সন্তান রয়েছে।
দস্যুতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৩ মার্চ নাটোর সদর থানা পুলিশ রাসেলকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে তিনি জেলে ছিলেন। জেলে থাকাবস্থায় রাসেলকে ডিভোর্স দিয়ে রাকিবকে বিয়ে করে নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করেন সাথী। এঘটনায় রাকিবের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছক কষতে থাকেন রাসেল।
বিশেষ পুলিশ সুপার এসএসপি মুক্তা ধর বলেন, এরপর ৩১ মে রাসেল জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় এসে রাকিবকে খুঁজতে থাকে। ১ জুন দুপুর ১২টার দিকে কৌশলে রাকিবকে ডেকে নিয়ে আসে নাটোর রেলওয়ে প্লাটফর্মের তিন নম্বর ওভার ব্রিজের ওপর। সেখানে রাকিব তার স্ত্রীর সাবেক স্বামী রাসেলকে দেখা মাত্রই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে রাসেল ও তার সহযোগীরা রাকিবের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যান।
হত্যার ঘটনার পর রাসেলকে প্রধান আসামি করে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় মামলা করেন নিহত রাকিব হোসেনের বড় ভাই মো. শাকিল হোসেন।
গ্রেপ্তার রাসেল ওরফে কাটা রাসেলের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র আইন, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, চুরি, নারী নির্যাতন ও অন্যান্য ধারার আইনে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে দুটি মামলা তদন্তাধীন। অবশিষ্ট ১২টি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে এসএসপি মুক্তা ধর বলেন, রাকিবকে হত্যার ঘটনায় রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।