ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, দেশের সব মানুষের গন্তব্যস্থান হয়ে গেছে ঢাকা শহর। যুগ যুগ ধরে এই শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হাউজিং সোসাইটিগুলো তাদের আবাসন প্রকল্প করছে না। আমি রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে অনুরোধ করছি, অপরিকল্পিতভাবে যেন আর আবাসন প্রকল্প গড়ে না ওঠে সেটি তদারকি করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে যেন কোনো ভবন নির্মাণ না করা হয়।
শনিবার (১১ জুন) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত ‘নগরে নিম্নবিত্তের আবাসন-বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ ঢাকা শহরে চলে আসছে। ক্রমাগত নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যা ঢাকা শহরে বেড়েই চলছে। নিম্নআয়ের এই বিশাল সংখ্যার মানুষের পুনর্বাসনের ও জীবনমান উন্নয়ন করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা নগরে নিম্নবিত্তের আবাসন-বাস্তবতা ও করণীয় বিষয়ে যে ৩টি গবেষণা করেছে এগুলো আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এখানে গবেষণার মাধ্যমে নিম্নবিত্তের আবাসনের জন্য যে ধরনের প্রকল্প তুলে ধরা হয়েছে তা আমরা পাইলটিংয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব। প্রথমে আমরা বিহারী পল্লিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটা বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশের শহরগুলোর মতো ঢাকা শহরে কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য বাস্তবসম্মত গবেষণার এখনই সময়। শহরের কোন রাস্তা একমুখী হবে আর কোন রাস্তা দ্বিমুখী হবে সেটি গবেষণা করে নির্ধারণ করতে হবে। বাস্তবসম্মত গবেষণা করে প্রতিবেশী দেশের শহরে কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছে। আমাদেরও গবেষণা করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ২০৫০ সালে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ শহরে চলে আসবে। এ বিষয়টি আমাদের এখনই ভাবতে হবে। এ সময় গবেষণার মাধ্যমে আমাদের প্রিয় ঢাকা শহরকে সুস্থ, সচল ও আধুনিক করে তুলতে বুয়েটের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মেয়র।
নিম্নআয়ের মানুষের আবাসন বিষয়ে ডিএনসিসি গুরুত্বারোপ করছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ২৪৯.৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গাবতলী সিটি পল্লীতে বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প চলমান আছে, যা আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭৮৪ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর জন্য ৪টি ১৫তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং একটি স্কুল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
বক্তব্য শেষে ডিএনসিসি মেয়র বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রাসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জাব্বার খান, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সচিব মামুন আল রশীদ, রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম প্রমুখ।