সৌরভ গাঙ্গুলি বুধবার বিকেলে এক টুইট করেছেন। যেখানে জানিয়েছেন যে, তিনি নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার বিসিসিআইয়ের সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জন। এসব বিষয়ে জানতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেন সৌরভকে। জিজ্ঞাসা করেন, ব্যাপার কী?
বিজেপির কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, সৌরভ নাকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, বিষয়টির সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগ নেই।
যদিও বুধবার সন্ধ্যার দিকে টুইট করার আসল কারণ জানিয়ে সৌরভ বলেন, একটি শিক্ষা সংক্রান্ত অ্যাপ আনতে চলেছেন তিনি। মাঝে ঘণ্টা দু’য়েক গুঞ্জনে ভাসল রাজনীতি থেকে ক্রীড়া মহল।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যে টুইট নিয়ে বুধবার বিকেলে গোটা ভারত তোলপাড়, তা কি আসলে এক বিজ্ঞাপনী চমক? ‘নতুন অধ্যায়’ কি আসলে একটি রিয়েল এস্টেট বিজ্ঞাপনের ব্র্যান্ড দূত হয়ে কাজ করা? এমন প্রশ্ন ওঠার পরে সৌরভের ঘনিষ্ঠ সূত্র তেমনই জানায়।
বস্তুত, সৌরভের এই ব্যাখ্যা আরও জল-বাতাস পায় সৌরভের ‘আলোড়ন সৃষ্টিকারী’ টুইটের ঘণ্টা তিনেক আগে করা একটি টুইটে। সেই টুইটে ইংরেজিতে যা লিখেছেন তা বঙ্গানুবাদে দাঁড়ায়, সাফল্য কোনো গন্তব্য নয়, একটা যাত্রা। তারপরে রয়েছে, একটি রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম। সেখানেই সৌরভ লিখেছেন, বিস্তারিত জানতে নজর রাখুন। সঙ্গে হ্যাশ ট্যাগ দিয়েছেন, ‘লিভ টু উইন’ ও ‘ব্র্যান্ড কোলাবোরেশেন’। সঙ্গে রয়েছে, এক ঝাঁক উচ্ছ্বল তরুণ-তরুণীর সঙ্গে সৌরভের ছবি। আরও দেখা যাচ্ছে, ওই ‘লিভ টু উইন’ হ্যাশটাগেই সৌরভ মঙ্গলবার তার ইন্সটাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।
কিন্তু ভক্তরা সেসব খতিয়ে দেখেনি। বিভিন্ন স্তরে জল্পনা শুরু হয়েছে সৌরভের রাজনীতির ইনিংস নিয়ে। প্রসঙ্গত, সৌরভের কাছে রাজনীতিতে যাওয়ার প্রস্তাব আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সৌরভ সব প্রস্তাবের জবাবেই বলেছেন, ‘আপাতত’ তিনি রাজনীতিতে যেতে ইচ্ছুক নন। বরং, তিনি চান অনেক বেশি করে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে। যে কারণে, বিসিসিআই সভাপতি হওয়া তার কাছে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা বিধায়ক হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি পছন্দের।
কিন্তু সৌরভের রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা তারপরেও থামেনি। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে। নৈশভোজের সেই আসরে হাজির ছিলেন বিজেপির আরও তিন নেতা। তখনই জল্পনা তৈরি হয়েছিল সৌরভ কি তবে বিজেপির টিকিটে রাজ্যসভায় যেতে চান? বুধবার আচমকা সৌরভ টুইটে নতুন অধ্যায় শুরুর কথা বলতেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে সেই নৈশভোজের কথা। তবে কি শাহের সঙ্গে সে দিনই পরবর্তী ‘নতুন অধ্যায়’-এর রূপরেখা তৈরি হয়েছিল!
বুধবার বিকেলে সৌরভের টুইটের পরে এমনও রটে যায় যে, তিনি ইতোমধ্যেই বিসিসিআই সভাপতি পদ থেকেও ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। এরপর তার গন্তব্য রাজ্যসভা এবং তা বিজেপির টিকিটে। তবে সংবাদসংস্থা এএনআই বিসিসিআই সচিব তথা অমিত শাহের পুত্র জয় শাহকে উদ্ধৃত করে জানায়, এই খবর ঠিক নয়। সৌরভ আদৌ বিসিসিআইয়ের সভাপতি পদ ছাড়েননি।
জানা গেছে, বিসিসিআই সভাপতি পদে সৌরভের মেয়াদ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আগামী সেপ্টেম্বরে। ধারণা করা হচ্ছে, তার আগেই রাজনীতিতে যেতে পারেন সৌরভ। অথবা, তিনি হতে পারেন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসির চেয়ারম্যান।
বুধবারের টুইটে অবশ্য তার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ঘোষণা নেই। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯২ সাল থেকে ৩০ বছর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন। এ জন্য সকলের শুভেচ্ছা চান। পাশাপাশি জানিয়েছেন, তিনি যে কাজ করতে চলেছেন, তাতে অনেক মানুষের ভাল হবে।
এই ‘মানুষের ভাল’ হওয়ার বিষয়টির ফলেই রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা আরও জোরালো হয়। তবে কিনা, শিক্ষা সংক্রান্ত অ্যাপ বাজারে আনলেও মানুষের ভালই হবে।
সৌরভের রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে অনেকে দাবি করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সে খবর সত্যি হয়নি। এবারো জল্পনার জন্ম হতে না হতেই তাতে জল ঢেলে দিচ্ছে তারই করা অন্য একটি টুইট।