নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মূলত এনজিওর থেকে নেওয়া ঋণমুক্ত হতে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেন গিয়াস উদ্দিন শেখ (৪৫)।
মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে নরসিংদী জেলা পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান।
এর আগে গত রোববার (২২ মে) সকালে বেলাবো উপজেলার বাবলা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন শেখের নিজ বাড়ি থেকে স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৬), ছেলে রাব্বি শেখ (১২) ও মেয়ে রাকিবা শেখের (৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলেই গৃহকর্তা গিয়াস উদ্দিন শেখকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই।
জিজ্ঞাসাবাদে গিয়াস উদ্দিন ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও চাকু দিয়ে কুপিয়ে তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। আটকের পর তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত ক্রিকেট ব্যাট ও চাকু উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর গতকাল সোমবার (২৩ মে) বিকেলে ঘটনার দায় স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হকের আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন গিয়াস উদ্দিন শেখ।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, গিয়াস উদ্দিন শেখ জুয়া খেলায় আসক্ত ছিলেন। জুয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়াও তিনি তার শ্বশুর, শ্যালক ও ব্যক্তিপর্যায়ে সুদের বিনিময়ে ধার এবং একাধিক এনজিও থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। যার ফলে সব মিলিয়ে তাকে মাসিক ২২-২৩ হাজার টাকা কিস্তি দেওয়া লাগতো। এনজিও থেকে আনা ঋণ তার স্ত্রীর নামে ছিল। যার নামে ঋণ তিনি মারা গেলে ঋণের টাকা মাফ হয়- এমনটাই ধারণা ছিলো গিয়াস উদ্দিনের। অপরদিকে বছর দুই বছর আগে পাশের বাড়ির রেনু মিয়া নামে একজনের সঙ্গে তার জমি সংক্রান্ত বিরোধ তৈরি হয়। সেই বিরোধের জেরে সম্প্রতি রেনু মিয়ার পরিবারের সঙ্গে গিয়াস উদ্দিন শেখের পরিবারের বেশ কয়েককবার তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়।
স্ত্রীকে হত্যা করে ঋণের টাকা থেকে বাঁচবেন এবং জমি নিয়ে বিরোধ থাকা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাবেন- এমন ভাবনা থেকেই গিয়াস উদ্দিন শেখ প্রথমে তার স্ত্রী রহিমা বেগমের মাথায় ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে সজোরে আঘাত করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ঘরের মেঝেতে ফেলে গরু জবাই করার ছুরি দিয়ে পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করেন। স্ত্রীকে হত্যার পর পাশের ঘরে থাকা দুই সন্তানকে ঘুমন্ত অবস্থায় ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়েই মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। মাঝরাতে এই কাজ শেষে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত গঙ্গাজরি নামক স্থানীয় একটি নদীর পাশের ঝোপে লুকিয়ে থাকেন। ফজরের আজানের পর সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে গাজীপুরে নিজ কর্মস্থলে চলে যান। পরে সকালে বাড়িতে ছুটে আসেন তার ভাইয়ের ফোনে। কোনো কিছুই জানেন না এমন ভান করে সাংবাদিকসহ সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন এবং পাশের বাড়ির রেনু মিয়াকে এ ঘটনার জন্য দোষী করেন।
এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ঘটনার রাতে গিয়াস উদ্দিন শেখ বাড়িতে ছিলেন না- এমন দাবি করলে আমরা তার ফোন ট্র্যাক করলে ঘটনাস্থলের আশপাশেই তার অবস্থান ছিল বলে নিশ্চিত হই। সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে তিনি সব স্বীকার করেন। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাইয়ের দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে