পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। গত রোববার (২২ মে) দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বোরনো প্রদেশের রান শহরের আশেপাশে সন্ত্রাসীদের হামলায় বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।
নাইজেরিয়ার এই অঞ্চলটি ক্যামেরুন সীমান্তের কাছে অবস্থিত। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২৪ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ২০০৯ সাল থেকে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা এবং বিশেষ করে বোরনো প্রদেশটি জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারামের নেতৃত্বে বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের মতে, গত এক দশকেরও বেশি সময়ে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বিভিন্ন হামলা এবং হামলা পরবর্তী মানবিক সংকটে মারা গেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দারা গত রোববার হওয়া সর্বশেষ এই হামলার জন্য বোকো হারামকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অনিয়েমা নওয়াচুকউ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
হারুন টম নামে নাইজেরিয়ার বোরনো প্রদেশের রান শহরের এক কৃষক জানিয়েছেন, ‘নিরীহ মানুষদের হত্যার ঘটনায় আমরা সবাই বেদনার্ত। প্রাণ হারানো এসব মানুষ তাদের কৃষি জমিতে কাজ করছিলেন। … আমরা রানে ৫০ জনকে আজ দাফন করেছি।’
তিনি আরও জানান, ‘আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে এসব মানুষ তাদের কৃষিজমি পরিষ্কারের কাজ করছিলেন। আর অন্যরা কাঠের জন্য (অন্যত্র) গিয়েছিল।’
সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাড়ি-ঘর হারিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন আগিদ মুহাম্মদ নামের একজন কৃষক। সম্প্রতি তিনি আবার রান শহরে ফিরে এসেছেন। আর গত রোববারের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের একটি দৃশ্য রয়টার্সের কাছে বর্ণনা করেছেন তিনি।
আগিদ মুহাম্মদ বলছেন, ‘নিজেদের কৃষিজমিতে কাজ করার সময় মোটরসাইকেলে করে বোকো হারামের বিপুল সংখ্যক সন্ত্রাসী স্থানীয়দের ঘিরে ধরে। এসময় সন্ত্রাসীদের কাছে বন্দুক এবং অনান্য অস্ত্র ছিল। এরপর সবাইকে জিম্মি করে একে একে হত্যা করা হয়।
তার চাচা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন জানিয়ে আগিদ আরও বলেন, ‘সবাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে গলা কেটে হত্যা করা হয়। যখন আমি আপনার সাথে কথা বলছি তখনও অনেক লোকের খোঁজ নেই।’
পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ দেশ নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ডাকাতি, হত্যা, লুটপাট, স্কুলের শিক্ষার্থীদের বন্দি ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো অপরাধ প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। এসব অপরাধ বন্ধে নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদেক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম ও আইএস (ইসলামিক স্টেট) পশ্চিম আফ্রিকা শাখার সদস্যরাও নিয়মিত এসব অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে নাইজেরিয়াভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।