মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২১-২২ অর্থবছরে শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি (এমএসআর) খাতে এক কোটি ২১ লাখ টাকার টেন্ডারে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারের সর্বনিম্ন দরদাতাদের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদফতরে একটি কাগজ পাঠানো হয়। সেই কাগজে ৬ জনের তালিকায় দুইজন সদস্য স্বাক্ষর করেননি বলে জানা গেছে। কারণ ইতোমধ্যে এক কর্মকর্তা বদলিজনিত কারণে স্বাক্ষর করেনি বলে নিশ্চিত করেছেন।
অপরজন তার স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ওই কর্মকর্তা তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য এমন করেছেন। এ বিষয়ে অফিসপাড়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাপ্ত তথ্যে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০২১-২২ অর্থবছরের চিকিৎসা শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি খাতের একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরে ৯ জন ঠিকাদার টেন্ডার জমা দেন।
এই টেন্ডার কমিটির ৬ সদস্য হলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফুজ্জামান লিটন, মেডিকেল অফিসার মারুফ হাসান, গাংনী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন, তৎকালীন গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলাউদ্দীন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল হারুন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফেরদৌস পারভেজ। যদিও টেন্ডার প্রক্রিয়ার শুরুতেই হাসপাতালের আরএমও ডা. মোহাম্মদ খোকন রেজার নাম ছিল। টেন্ডারের মাঝখানে তার নামটিও পরিবর্তন করে অন্য এক চিকিৎসককে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার বানিয়ে কমিটিতে নাম দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল এ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর করে সর্বনিম্ন দরদাতাদের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়।
পরে জানা যায়, কমিটিতে থাকা এলজিইডি অফিসার ফয়সাল হোসেন ও শিক্ষা অফিসার মো. আলাউদ্দীন ও সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসক ডা. ফয়সাল হারুনের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফুজ্জামান লিটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাক্ষর বলে দাবি করেন।
পরে তিনি ভুল স্বীকার করে নেন এবং বলেন দুইজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে তিনি টেন্ডার স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠিয়েছেন। কমিটির সেই দুইজন সদস্য ডা. আশরাফুজ্জামান লিটন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফেরদৌস পারভেজ। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, হয়তো অন্য কেউ ৬ জনের স্বাক্ষর করেছেন। দুইজনের স্বাক্ষর দিয়ে টেন্ডারের কাগজ পাঠানো যায় কি না তার কে নো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া কমিটির সদস্য গাংনী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন বলেন, এ স্বাক্ষর আমার হতে পারে না। কারণ আমি স্বাক্ষর করার পর তারিখের জায়গায় কখনই ডট ব্যবহার করি না। তাছাড়া স্বাক্ষরটিও আমার স্বাক্ষরের সঙ্গে মেলে না। কেউ তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
ওই কমিটির আরেক সদস্য গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলাউদ্দীন। তিনি বলেন, এপ্রিলের আগেই আমি গাংনী উপজেলা থেকে মুজিবনগর উপজেলায় বদলি হয়ে এসেছি। আর এ স্বাক্ষরও আমার করা নয়। আমার স্বাক্ষরের সঙ্গে বেশ কয়েক জায়গায় অমিল রয়েছে। কমিটির সদস্য ডা. ফয়সাল হারুন বলেন, দেখে মনে হচ্ছে এটি আমার স্বাক্ষর। তবে ১৬ এপ্রিল আমি কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেছি কি না তা মনে করতে পারছি না।
এসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফুজ্জামান লিটন বলেন, আমার কাছ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর দ্রুত কাগজটি চেয়েছিল। আমি উপস্থিত দুইজনের স্বাক্ষর নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠিয়েছি। তারপর কী হয়েছে আমার কিছুই জানা নেই। শুধুমাত্র দুইজনের স্বাক্ষর করে এমন কাগজপত্র পাঠানো যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কে নো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে ডা. খোকন রেজাকে কেন কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই চিকিৎসক হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে বিনা ছুটিতে এক মাস অনুপস্থিত ছিলেন। তাই তাকে না জানিয়ে কাজের সুবিধার্থে তার নাম বাদ দিয়ে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসারের নাম কমিটিতে রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. জাওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। টেন্ডার প্রক্রিয়াটির বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের ব্যাপার। আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থ্য গ্রহণ করব।