রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ। প্রায়ই তার গ্রামের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের কাছ থেকে অভিযোগ পান, ফোনে পাওয়া যায় না তাকে। অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে ফোন। তবে তিনি কখনও ফোন বন্ধ রাখেন না। খোলা থাকলেও বন্ধ পান তার বন্ধুরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলছেন, ক্যাম্পাসে নেটওয়ার্ক খুবই বাজে। ডাটা চালু করলেও অনেক সময় চালু হয় না, হলেও কোনো প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারি না। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে নেটওয়ার্ক সব সময় ইমার্জেন্সি থাকে।
এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন শিক্ষকরাও। চালু রেখেও বিভিন্নজনের কাছ থেকে ফোন বন্ধ করে রাখার অভিযোগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের চেম্বারে নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অভিযোগ করে বলেন, ক্যাম্পাসে নেটওয়ার্ক সমস্যা খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। চালু থাকা অবস্থায় অনেকেই ফোনে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। যদিও আমি কখনো ফোন বন্ধ করি না। আবার কথা বলতে বলতে দেখি কল কেটে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর জানান, তিনি নিজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে কথা বলতে পারেন না। অনেক সময় ফোনেও কথা বলা যায় না। প্রায় সময় তাকে ফোন বন্ধ পাওয়ার কথা বলেন সহকর্মীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত ক্যাম্পাস থেকে টাওয়ার সরিয়ে নেওয়ার ফলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে সমস্যার শুরু হয় আরও বছর দেড়েক আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদ থেকে ফোন অপারেটরগুলো টাওয়ার খুলে নিয়ে যায়। তখন ভবনটির নির্মাণকাজের কারণে টাওয়ারগুলো খুলে নেওয়া হয়।
তবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাম্পাসে অর্ধ লাখের কাছাকাছি জনসংখ্যার জন্য কোনো টাওয়ার নেই। মাঝে করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সমস্যা টের পাওয়া না গেলেও খোলার পর নেটওয়ার্ক নিয়ে ভোগান্তি শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার।
এদিকে ভোগান্তি নিরসনে সংশ্লিষ্ট ফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন থেকে বিল্ডিংয়ের ওপর টাওয়ার না বসিয়ে সরাসরি ভূমিতে টাওয়ার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামকে। তিনি জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে আগে টাওয়ারগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। নির্মাণ কাজের জন্য সেখান থেকে টাওয়ারগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আপত্তির একটা বিষয় ছিল। এখন ভূমি থেকে টাওয়ার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জাহিদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে অপারেটরগুলোর সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের পুকুরের পাশে তাদের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বাংলালিংক, রবি, টেলিটক ল্যান্ড টাওয়ার করবে। আর জিপি আলাদা করে জায়গা চাওয়ায় বিষয়টা এখনো সমাধান হয়নি।