পদত্যাগের দাবিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাড়ির সামনে এবার বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সে সময় পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। অবনতিশীল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে রোববার এ বিক্ষোভ হয়।
গত কয়েক মাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং, রেকর্ড মূল্যস্ফীতি এবং তীব্র খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে শ্রীলঙ্কায় ক্রমবর্ধমান গণঅসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর দেশটি সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে।
রোববারের বিক্ষোভে ছাত্রনেতাদের কলম্বোয় রাজাপক্ষের বাসভবনের দেয়াল টপকে ঢুকতে দেখা যায়। এর আগে অন্য বিক্ষোভকারীরা যাতে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড বসায়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ ঠেকাতে দেওয়া ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলতে চাইলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। দেয়ালের ওপর দাঁড়ানো এক ছাত্রনেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারেন, কিন্তু সরকার পুরোপুরি বিদায় না নেওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি আমাদের আন্দোলন থামাতে পারবেন না।’
অনেককে ‘বিদায় নাও গোতা’ সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। মাহিন্দা রাজাপক্ষের ছোট ভাই ও দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপক্ষের ডাকনাম এটি। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভের সময় শ্রীলঙ্কার শাসক পরিবারের শীর্ষ ব্যক্তি মাহিন্দা রাজাপক্ষে বাসভবনে ছিলেন না। শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ শেষ হয়েছে। এদিকে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সমুদ্রতীরবর্তী বাড়ির সামনে জড়ো হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা প্রেসিডেন্ট এবং তার ভাইয়ের (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। দেশজুড়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ি ও কার্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের চড়াও হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
চলতি সপ্তাহে মধ্যাঞ্চলীয় শহর রাম্বুক্কানায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন। গত মাসে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এটি ছিল প্রথম কোনো প্রাণহানি।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও প্রবাসী আয়ে ধাক্কা লাগলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধসে পড়ার বিষয়টি সামনে আসে। দেশটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির অর্থ জোগাতে ব্যর্থ হয়। এতে চাল, গুঁড়াদুধ, চিনি, ময়দা ও ওষুধের সরবরাহ কমে যায়। লাগামহীন মূল্যস্ফীতি দুর্ভোগ আরও বাড়ায়। জ্বালানি সঙ্কটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দিনের অধিকাংশ সময় লোডশেডিং হচ্ছে। সময় ভাগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে পেট্রল ও কেরোসিনের জন্য মানুষকে সার্ভিস স্টেশনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।