সরকারকে ইঙ্গিত করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আমরা সিন্দাবাদের দৈত্যের চেয়ে নিষ্ঠুর এক দৈত্যকে কাঁধে নিয়ে চলছি। না নিয়েও উপায় নেই। অনেক জোরে ঝাঁকি দিচ্ছি, কিন্তু পড়ছে না, যাচ্ছে না।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘ইলিয়াস আলীসহ সকল গুমের শিকার ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মান্না বলেন, তখনই বলেছিলাম, মাফ চেয়ে, হাত বদল করে যতই মিনতি করেন, এরা আপনাদের হারানো স্বজনদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কারণ ওরা তো নিজেরাই নিয়ে গেছে। নিয়ে যে গেছে, এর পেছনে লক্ষ্য ছিলো একটাই। তাদের রাজনীতি, দল, ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা একদিকে আপনাদের স্টিক দেখাবে, আরেক দিকে ক্যারট দেখাবে। ইংরেজিতে যেমন বলে স্টিক অ্যান্ড ক্যারট পলিসি— ঠিক এরকম চেষ্টা করবে। আপনাদের ধমক দেবে আবার ওইদিকে নির্বাচনের টোপ দেবে। দেখেছেন না, স্যাঙ্কশন দেওয়ার চার মাস পরে গতকাল কুমিল্লায় আবার ক্রসফায়ার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ক্রসফায়ারের জন্য আমেরিকা বলেন, কিংবা অন্যরা বলেন, নতুন করে আবার প্রশ্ন করবে, আবার তাদের নতুন করে স্যাঙ্কশন দেবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি সবসময় মানবতা রেখে চলে না। বরঞ্চ বেশিরভাগ সময় ক্ষমতার হিসাব-নিকাশের ওপরে চলে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গুম ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। তাদের প্রতি কীভাবে আমরা সহানুভূতি প্রকাশ করব, সে ভাষাও আমাদের কাছে নেই। গুমের পর থানায় জিডি পর্যন্ত করতে দেয়নি। আজ কিন্তু বিষয়গুলো আর গোপন নেই। গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কান্নায় আমরা ভাষাহীন।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত আমেরিকার মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে প্রকৃত সত্য ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। অনেক মন্ত্রী বলেন, এ রিপোর্টের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক তফাৎ। আমি তাদের সঙ্গে একমত যে, এ রিপোর্টের সাথে বাস্তবতার তফাৎ এ কারণে যে, বাস্তবতা আরও কঠিন। এ রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারি, সরকার কোনো কিছু ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল ও ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গণ-অধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য রাখেন।
গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাইদুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের ভাই মশিউর রহমান লোটাস, পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে আদিবা হোসেন হৃদি, নুরুজ্জামান রনির স্ত্রী মনিসা, মনির হোসেনের ভাই ওবায়দুল্লাহ হোসেন তাদের স্বজন হারানোর বেদনা সভায় তুলে ধরেন। এতে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান প্রমুখ।