অনলাইন বা ডিজিটাল সেবায় নাগরিক ভোগান্তি ও দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন ও সাধারণ নাগরিক সমাজ নামক দুইটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সেগুনবাগিচার রয়েল ইন হোটেলে সংগঠন দুইটির আয়োজনে ‘ডিজিটাল সেবায় নাগরিক ভোগান্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঘোষণা দিয়ে ২০২১ সালকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ইতোমধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রার সময় পেরিয়ে গেছে। আজ সরকারি, বেসরকারি, সামরিক, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সকল কার্যক্রম প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট নির্ভর। প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী আজ অনলাইন সেবার আওতায়। ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা দেশের কার্যক্রম গতিশীল করলেও নাগরিক জীবনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, ই নামজারি, রেলওয় টিকেট, এমনকি ই-পাসপোর্ট সহ আরও বেশকিছু নাগরিক সেবায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের।
বক্তারা বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্রের ক্ষেত্রে, প্রথমত একজন নাগরিককে অনলাইনে আবেদন করতে হয়, এরপর এই আবেদন পত্র নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। সেখান থেকে নাগরিক সনদ প্রদানসহ আরও বেশ কিছু জটিলতা পেরিয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত অফিসে গিয়ে তা এন্ট্রি করতে হয়। এরপর কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য একটি ম্যাসেজের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে হয় প্রায় এক থেকে দুই মাস। এরপর মেসেজ প্রাপ্তির পর ১২ থেকে ১৮ প্রকার কাগজপত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশনে হাজির হতে হয়। কাগজপত্র সব ঠিক থাকলে পুনরায় ছবি তোলার মেসেজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরপর ছবি তোলার পর আরও প্রায় বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পর মিলে জাতীয় পরিচয় পত্র। এখানে উল্লেখ্য যে অনেক নাগরিক অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে অনেক দ্রুততার সঙ্গে এনআইডি পেয়ে থাকেন।
তারা আরও বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের পর সেই কাগজপত্র নিয়ে এবং বিভিন্ন প্রমাণপত্র নিয়ে যারা ভাড়াটিয়া তাদের বাড়ির মালিকের কাছ থেকে সনদ নিয়ে বা বিদ্যুতের বিলসহ স্থানীয় কাউন্সিলর চেয়ারম্যান বা মেম্বারের অফিসে যেতে হয়। কাউন্সিলর চেয়ারম্যানের অফিসের কিছু কর্মচারী এমনকি দালালদের অনৈতিক প্রস্তাবের সম্মতি না হলে এক্ষেত্রে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে জমির কাগজপত্র বা হোল্ডিং ট্যাক্স চাওয়া হয়। কাগজপত্র না দিলে বা অনৈতিক প্রস্তাব এ মিল না হলে মিলে না জন্ম নিবন্ধন।
এছাড়া ই নামজারি জমির কাগজপত্রসহ সকল তথ্যাদি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করার পর পুনরায় সেই কাগজপত্র এর হার্ডকপি কানুনগো অফিসে জমা দিতে হয়। পরবর্তীতে কানুনগো অফিস থেকে তহসিল অফিসে যোগাযোগ করার জন্য মেসেজ দেওয়া হয়। এখানেও নাগরিকদের দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। এরপর পুনরায় কানুনগো অফিসে হেয়ারিং এর জন্য মূল কাগজপত্রসহ হাজির হতে হয়। এরপর আরও অন্যান্য প্রক্রিয়া এবং সরকারি ফি জমা দেওয়ার পর মিলে নামজারির কাগজপত্র।
একইভাবে ই-পাসপোর্টসহ অন্যান্য সেবা ক্ষেত্রেও ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছে নাগরিকরা। রেলের টিকিটের ভোগান্তির কথা সবারই জানা।
তারা বলেন, আমাদের বক্তব্য হল অনলাইনে আবেদনের অর্থ হলো অনলাইনেই সনদ পেয়ে যাওয়া। সেখান থেকে একজন নাগরিক প্রিন্ট করে তার সনদ বা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন। কিন্তু বর্তমান প্রক্রিয়ায় অনলাইনে আবেদন করার পর আবার মূল কাগজপত্র জমা দেওয়াসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা এই সিস্টেমের পরিবর্তন চাই।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, সাধারণ নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রাশেদুল হাসান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা বেগম, লায়ন সাব্বির, কোষাধক্ষ্য আলি মহাম্মদ রনি প্রমুখ।