বগুড়া কারাগারে মাদক কারবার চালাচ্ছিল সিন্ডিকেট। তাতে বাধা দেওয়ায় হামলার শিকার হয়েছেন কারারক্ষি (সিআইডি) সদস্য আরিফুল ইসলাম। গত ২ এপ্রিল কারা অভ্যন্তরের এমন কাণ্ডে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আট বন্দিকে।
বগুড়া কারাগার থেকে সরিয়ে দেওয়া ওই আট বন্দী হলেন- হালিম বগা (হাজতি নং ১২৬৬/১৮), জাহিদুল ইসলাম (হাজতি নং ৪৫৮৬/১৮), মুকুল হোসেন (কয়েদী নং ৮৯৬৪/এ), আব্দুল মতিন মণ্ডল (কয়েদী নং ১৩৭৯/এ), ইউসুফ (কয়েদী নং ৬২০৪/এ), জিয়া (কয়েদী নং ৫৫৮৮/এ) শফিউল ইসলাম (কয়েদী নং ৯৯৫৫/এ) এবং জাকির হোসেন (কয়েদী নং ১৭৬২/এ)
এদের মধ্যে মুকুল হোসেন, আব্দুল মতিন মণ্ডল এবং ইউসুফকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নওগাঁ কারাগারে পাঠানো হয়েছে হালিম বগা ও জাহিদুল ইসলামকে। এ ছাড়া জিয়া, শফিউল ইসলাম এবং জাকির হোসেনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহীর ডিআইজি প্রিজনের নির্দেশে ওই আট বন্দীকে বগুড়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরই এই নির্দেশ দেন ডিআইজি প্রিজন।
সূত্র জানাচ্ছে, গত ১০ জানুয়ারি বগুড়া কারাগারে বদলি হয়ে আসেন আরিফুল ইসলাম। তিনি কারাগারের বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য আইজি প্রিজনের দপ্তরে পাঠাতেন। বগুড়া কারাগারের অনিয়মের তথ্য পাঠাচ্ছিলেন আরিফুল। তাতেই চক্ষুশুল হন মাদক সিন্ডিকেটের। তাকে সরিয়ে দিতেও তৎপরতা শুরু করে এই সিণ্ডিকেট।
মাদক সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার নামে গত ২ এপ্রিল বিকেলে আরিফুলকে ডেকে নেন চিহ্নিত দুর্ধর্ষ আসামি হালিম বগা (২৮)। এক পর্যায়ে তার গালে ধারাল ব্লেড দিয়ে আঘাত করেন ওই বন্দী। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই দিনই আরিফুলকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাগি আসামি হালিম বগা বগুড়া শাজাহাপুর উপজেলায় শাকপালা সোনারপাড়ার সৈয়দ আলীর ছেলে। ২০১৮ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি সেনাসদস্য হত্যা মামলার অভিযুক্ত হিসেবে কারাগারে আসেন তিনি। গ্রেপ্তার হবার আগে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নামেন হালিম বগা। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই পা হারান তিনি।
তার মামলা নং- শাজাহানপুর পিএস ২১ তাং ২৯-১১-২০১৭ ধারা : ৩৯৬/৩৪। মামলাটি বগুড়া জজ কোর্টে বিচারাধীন। গত ৪ বছর ধরে তিনি কারাগারে আছেন। পঙ্গু হলেও কারাগারের অভ্যন্তরের মাদক কারবারে যুক্ত হালিম বগা। কারাগারে তার পরিচিতি মাদক বগা নামে। কেবল মাদক কারবারই নয়, কারাগারে মাদক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। বিষয়টি জেনেও নিরব ছিল কারাকর্তৃপক্ষ।
কারাগারের আরেকটি সূত্র জানাচ্ছে, আরিফুলের ওপর হামলার ঠিক ৫দিন আগে একই ঘটনা ঘটে। কিন্তু কারাগারের ভেতরের সেই ঘটনাটি পুরোপুরি ধামাচাপা দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে কারারক্ষিদেরও মুখ খুলতে বারণ করে দেয়। কিন্তু বন্দী স্থানান্তর শুরু হলে বিষয়টি সামনে আসে।
এ বিষয়ে বগুড়া কারাগারের জেলার এস এম মহীউদ্দিন হায়দার সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার বগুড়া কারাগারে আসেন রাজশাহীর ডিআইজি প্রিজন অসীম কান্ত পাল। ওই সময় তিনি অভিযুক্ত হালিম বগাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
বগা ডিআইজি প্রিজনকে জানান, সিআইডির কারারক্ষি আরিফুল মাদকের নামে বার বার তার শরীর তল্লাশি করতেন। কোনো কিছু না পেয়ে তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে ক্ষোভ থেকেই তিনি আরিফের গালে ভাঙা ব্লেড দিয়ে আঘাত করেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন কারারক্ষি আরিফুল। তিনি জানান, হাজতী হালিম বগা ছিলেন কারাগারের মেডিকেলে। সেখান থেকেই তিনি কারাগারের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিভিন্ন মাদক কারবারিদের সাথেও তার সখ্যতা ছিল।
গোপন তথ্য পেয়ে তিনি বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানান। তাদের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হালিম বগাকে কারা হাসপাতাল থেকে সাধারণ বন্দিখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কারা হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত ছিলেন বগা।
কারারক্ষি আরিফুল জানান, প্রায়ই বাইরে থেকে কারাগারের ভেতরে মাদকের বল পড়ে। সিন্ডিকেটের হাত ঘুরে সেই বল চলে যায় মাদক সেবীদের কাছে। গত ২ এপ্রিলও এমন তথ্য পেয়ে ওয়ার্ডে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বগা তাকে গোপন মোবাইল রাখার তথ্য দেওয়ার নামে ডেকে ব্লেড দিয়ে আঘাত করেন।
তবে বগুড়া কারাগারে কোনো মাদক বিক্রি বা সেবন করা হয় না বলে দাবি করেছেন বগুড়া কারাগারের জেলার এস এম মহীউদ্দিন হায়দার। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সুশৃঙ্খলল পরিস্থিতি বজায় রাখতে। এরপরও কারও বিরুদ্ধে আভিযোগ আসলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কারারক্ষির ওপর হামলার বিষয়টি তদন্তাধীন বলে জানান জেলার। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৮ জন বন্দীকে বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক কারণে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।