গোপালগঞ্জে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জমিতে স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় যুবলীগ নেতার দখলে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদে গেলে হামলার শিকার হন সওজের ৪ কর্মকর্তাসহ ৬ জন। এ সময় ভাঙচুর করা হয় সরকারি গাড়ি। এমনকি অভিযানে নেতৃত্বে দেওয়া সওজ খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা অনিন্দিতা রায়ের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়।
সওজ খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা অনিন্দিতা রায় বলেন, শেখ সাহাবুদ্দিন হিটু স্থানীয় যুবলীগ নেতা হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে সওজের জমি দখল করে রেখেছেন। অবৈধভাবে স্থায়ী ভবন গড়ে ব্যবসা করছেন। তাকে বারবার জমি ফাঁকা করার নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
তিনি আরও বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে তাকে সহায়তা করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তিনি শুরু থেকেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করেছেন, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বেতগ্রামে গোলচত্বর এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। এ হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কুমারেশ বিশ্বাস, উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, বিল্লাল হোসেন, সার্ভেয়ার সোহাগ ও দুজন গাড়ি চালক।
স্থানীয় ও হামলায় আহত ব্যক্তিরা জানান, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া ও গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া-পয়সারহাট সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে গত ২৯ মার্চ থেকে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ সড়কে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সড়ক বিভাগ। ২৯ ও ৩০ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও বিপত্তি বাধে ৩১ মার্চ। সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া-পয়সারহাট সংলগ্ন বেদগ্রাম গোলচত্বর এলাকায় অভিযান শুরু করে বেশ কয়েক কাঁচা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় যুবলীগ নেতা শেখ সাহাবুদ্দিন হিটু দখলে থাকা সওজের প্রায় ৩০ শতক জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়। এ সময় তার নেতৃত্বে অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন সওজ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মারধর করে মোট ৬ জনকে আহত করে। এ সময় সওজের ৩টি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। বাদ যায়নি অভিযানে নেতৃত্বে দেওয়া সওজ খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা অনিন্দিতা রায়ের গাড়িও।
হামলার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কাউকে আটক করেনি পুলিশ। এ ঘটনার পর স্থগিত করা হয় উচ্ছেদ অভিযান।
হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া শেখ সাহাবুদ্দিন হিটু গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে স্থানীয় যুবলীগ নেতা শেখ সাহাবুদ্দিন হিটুর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ ধরেননি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, হামলার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। যারা সরকারি জমি দখল করে রেখেছেন, তাদের সবাইকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থাপনা অপসারণ করে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।