রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে টেলিফোন করেছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ। টেলিফোনে রুশ প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি; জবাবে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের কারণেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হচ্ছে না।
শুক্রবার পুতিনকে টেলিফোন করে শুলজ বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে অভিযান চলার ফলে ইউক্রেনে দিন দিন ইউক্রেনের মানবিক বিপর্যয় প্রকট হয়ে উঠছে। দুই দেশের মধ্যকার সংকট কূটনৈতিক পন্থায় যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের আহ্বানও জানান তিনি।
জবাবে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের বেসামরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে রুশ সেনারা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং বেলারুশে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিরা যে বৈঠক করছেন, তা হয়তো এতদিনে সফলও হতো।
‘কিন্তু বৈঠক যে সফল হচ্ছে না তার জন্য দায়ী ইউক্রেন। কিয়েভ বরাবরই সেই আলোচনা ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন অবাস্তব দাবি উত্থাপন করছে। তবুও রাশিয়া চেষ্টা করছে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের সংকট সমাধানের জন্য,’— শুলজকে বলেন পুতিন।
টেলিফোন আলাপে পশ্চিমা দেশগুলোর ‘একচোখা’ নীতি’রও সমালোচনা করেন পুতিন। বলেন, ইউক্রেনে অভিযান নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার নিন্দা জানাচ্ছে, অথচ দোনেতস্ক রিপাবলিকের মাকিভা ও দোনেতস্ক শহরে যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণ করছে, সেদিকে পশ্চিমের কোনো নজর নেই।
গত ১৪ মার্চ দোনেতস্ক রিপাবলিকের প্রধান শহর দোনেতস্ক ও শিল্পশহর মাকিভায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইউক্রেনের সেনা বাহিনী। এতে এই দুই শহরে অন্তত ২০ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে এই ঘটনার পরিপূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘ।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি দেশটিকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্যপদ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।
ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার ২৩ তম দিনে পৌঁছেছে এই অভিযান। পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে হুমকি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেইনকে ব্যবহার করার চেষ্টা প্রতিহত করা এবং দোনেতস্ক ও লুহানস্কের রুশভাষীদেরকে ইউক্রেইনের ‘গণহত্যার’ হাত থেকে বাঁচাতে এই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ জরুরি হয়ে পড়েছিল।
অন্যদিকে ইউক্রেইন বলছে, তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়ছে। পুতিন গণহত্যা সংক্রান্ত যে দাবি করছেন, তা ঠিক নয় বলেও ভাষ্য কিয়েভের।
এদিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ইতোমধ্যে মস্কো বলেছে, ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন প্রতারক ও ক্ষয়িষ্ণু পশ্চিমাদের ছাড়া ভালোভাবেই চলতে পারবে রাশিয়া।
সূত্র: রয়টার্স, স্পুটনিক