কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুর খুনিয়া পালংয়ের ধেচুয়াপালং এলাকার রামু-মরিচ্যা সড়কের পাশ থেকে ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া মো. ওয়ায়েজ নামে এক ইজিবাইকচালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই কিশোরের ইজিবাইক ছিনতাই করার সময় বাধা দিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) ভোরে এ অভিযান চালিয়ে র্যাব এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে দুইজন পরিকল্পনাকারী ও দুইজন আন্তঃজেলা ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের সদস্য।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চকরিয়ার মগবাজারের বড়পুকুরিয়া চরনদ্বীপ গ্রামের আকতার হোসোনের ছেলে নুরুল ইসলাম (২০), আন্তঃজেলা ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের মূলহোতা ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতির আবুল কাশেমের ছেলে মো. আরিফ হোসেন (৩৬) ও তার সহযোগী উখিয়ার কুতুপালং দুই নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ইউ/ডব্লিউ-৫ ব্লকের আমির হামজার ছেল হোসেন (৩১)। পরে নুরুল ইসলামের দেওয়া তথ্য মতে হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অপর আসামি মহেশখালীর কালারমারছড়ার আলী আহম্মদের ছেলে আবু হেনা প্রকাশ হানিফকে (৩৩) কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমিতিপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ধেচুয়াপালং এলাকার রামু-মরিচ্যা সড়কের পাশে আব্দুল গণি মিয়ার জমি থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাতের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং ধারণা করা হয়, দুর্বৃত্তরা ওই কিশোরকে উপর্যুপরি আঘাত করে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। ওই কিশোরের পরিচয় এবং কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি। পরে মরদেহটি মো. ওয়ায়েজের বলে শনাক্ত করে পরিবার। এ ঘটনার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি নিহত কিশোর মো. ওয়ায়েজের বাবা মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে রামু থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র্যাব-১৫ ওই হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য র্যাব নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহারসহ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য দিয়েছেন এবং আসামি নুরুল ইসলাম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার ভিকটিম মো. ওয়ায়েজ একে অপরের বন্ধু। দুইজনেই পেশায় ইজিবাইকচালক।
তারা আরও জানিয়েছেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারির রাতে আসামি নুরুল ইসলাম ও তার সঙ্গী আবু হেনা প্রকাশ হানিফকে নিয়ে ভিকটিম ওয়ায়েজের ইজিবাইকে করে সমিতিপাড়া থেকে মরিচ্যা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। এরপর আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে নুরুল ইসলাম ও আবু হেনা মরিচ্যার খুনিয়াপালং এলাকায় রামু-মরিচ্যা রোডের পাশে ইজিবাইক দাঁড় করায়। এ সময় ওয়ায়েজকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইজিবাইকটি ছিনতাই করার চেষ্টা করে। এ সময় ওয়ায়েজ তাতে বাধা দেওয়ায় দুইজনে মিলে তাকে মারধর করে এবং ছুরিকাঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে চালক ওয়ায়েজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা তাকে পাশের জমিতে ফেলে ইজিবাইক, মোবাইলফোন ও টাকা-পয়সা নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়।
পরে নুরুল ইসলাম আন্তঃজেলা ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের মূলহোতা আরিফ হোসেনের সঙ্গে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি বিক্রি করার জন্য মোবাইলফোনের মাধ্যমে পরামর্শ করে। এরপর আসামি নুরুল ইসলাম ও আবু হেনা ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি অপর দুই আসামি আরিফ হোসেন ও হোসেনের (রোহিঙ্গা) কাছে জমা রাখে। আসামিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।