সিলেট: পারিবারিক কলহের জেরে সিলেটে নিজের শিশু সন্তানকে হত্যার দায়ে গ্রেফতার নাজমিন জাহানের (২৮) ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) নাজমিনকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
শুনানি শেষে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়া তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান এদিন সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কন্যা শিশুকে হত্যার দায়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল নাজমিনের। কিন্তু আদালতে আসার পর জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করলে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালত তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরআগে বুধবার দিবাগত রাতে সন্তান হত্যার অভিযোগ এনে নাজমিন জাহানকে একমাত্র আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তার স্বামী সাব্বির আহমদ।
গত বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টার দিকে নিজের ১৭ মাস বয়সী মেয়ে সন্তান নুসরাত হাজান সাবিহাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার করেন। এরপর বিকেলের দিকে নিহত শিশুর নিথর দেহ হাসপাতালে থাকাবস্থায় এসএমপির কোতোয়ালি থানায় আত্মসমর্পণ করেন নাজমিন।
তিনি পুলিশের কাছে শিশু সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তুলেন। তার মেয়ে বড় হয়ে যেনো এই বাবার পরিচয়ে দিতে না হয়, সে কারণে মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা পুলিশকে জানান। এছাড়া স্বামীর কাছ থেকে ‘অযত্ন, অবহেলা আর অপবাদ’পাওয়ার অভিযোগ তার। সে ক্ষোভ মেটান নিজের ১৭ মাস বয়েসি শিশু সন্তানের ওপর।
গ্রেফতার হওয়া নাজমিন জাহান সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাদেপাশা ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. জিয়া উদ্দিনের মেয়ে এবং কাতার প্রবাসী সাব্বির হোসেনের স্ত্রী। সাব্বির আহমদ সিলেট দক্ষিণ সুরমার বলদি এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে কলহের জের ধরে বুধবার বেলা ২টার দিকে নাজমিন তার ১৭ মাস বয়েসি শিশু সাবিহার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এসময় তার বোন ও প্রতিবেশী এক মহিলা শিশুটিকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবিহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্তান হত্যার রোমহর্ষক দিয়ে নাজমিন বলেন, দেশে অবস্থানকালে তার কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি সাব্বির। চার-পাঁচ দিন পর পর শুধু কয়েক মিনিটের জন্য মেয়েকে দেখতে যান। কিন্তু স্বামী হিসেবে তাকে কাছে পাননি। স্বামীর বিরুদ্ধে চরিত্রহীনতার অভিযোগ আনেন তিনি। সে বহু নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত এবং যার প্রমাণও আছে বলেও জানান। আর একজনের সঙ্গে পরকীয়া করলে হয়তো তাকে ফেরাতে পারতাম!
নির্দোষ সন্তানকে হত্যার বিষয়ে পুলিশের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমারতো সব শেষ। সন্তান বাবাকে কাছে পায় না, আমাকে সময় দেয় না। এক অর্থে সে আমাকে জিন্দালাশ করে ফেলছে। তাই আমার মাথা কাজ করেনি। তার প্রতি ক্ষোভে-কষ্টে মেয়েকে বালিশচাপা দেই। আমি ইমোশন থেকে আমার বাচ্চাটাকে মারছি। মেয়েকে মারার পর তাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরি এবং অনেক্ষণ কান্না করি। এসময় আমার বাচ্চার হৃদস্পন্দন আমি বুঝতে পারি। ওইসময় বাড়িওয়ালি এসে আমার কাছ থেকে আমার মেয়েকে নিয়ে নেন। এর পরপরই আমার মেয়ে করে বমি করে। পরে বাড়িওয়ালা তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাজমিন বলেন, ২০১৫ সালের মে মাসে সাব্বির হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর ৬ মাস পর সাব্বির বিদেশে চলে যান। এরপর তিনি একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং শাহপরান এলাকার থাকেন। সাব্বির বিদেশে যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ নেননি। ভরণ-পোষণও দেননি। বরং পরিচিতজনদের মাধ্যমে তাকে তালাক দেওয়ার কথা বলতেন। এমন অবস্থায় চার বছর পর ২০২০ সালে সাব্বির দেশে আসেন এবং তাকে বুঝিয়ে আবারও সংসার শুরু করেন। তখন তাকে গর্ভবতী অবস্থায় রেখে সাব্বির আবারও কাতার গিয়ে গর্ভের সন্তান নিজের নয় বলে দাবি করেন। তখন আমি ডিএনএ টেস্ট করার কথা বলি। কিন্তু এরপরও সাব্বির তার বিরুদ্ধে পরিচিতজনদের মাধ্যমে কুৎসা রটাতে থাকে। অপবাদ দিতে থাকে।
তিনি পুলিশকে বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসাবো না। সাব্বিরকেও ফাঁসাবো না। আমি চাইনা আমার মেয়ে তার চরিত্রহীন বাবার পরিচয়ে বড় হোক। সব দোষ আমার। আমি আমার মেয়েকে হত্যা করছি। আমার ফাঁসি হোক। অথবা কেউ আমার দুটো হাত কেটে ফেলুন। আপনারা যদি আমাকে শাস্তি না দেন, নয়তো যে কোনো সময় সুইসাইড করতে পারি।