ঢাকা: কারবন্দি অবস্থায় মৃত্যুকরণ করায় জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যশোরের কেশবপুরের রাজাকার কমান্ডার সাখাওয়াত হোসেনকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বাদ (অ্যাবেটেড) দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
একই মামলায় আমৃত্যু দণ্ডিত বিল্লালও মৃত্যুবরণ করায় তার আপিলও বাদ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ভার্চ্যুয়াল আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে সাখাওয়াত হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই মামলার আট আসামির মধ্যে কেশবপুরের অন্য সাত রাজাকারকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হচ্ছেন- মো. বিল্লাল হোসেন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ সরদার, মো. আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম ও মো. আব্দুল খালেক মোড়ল।
একই মামলার ওই আট আসামির মধ্যে গ্রেফতার ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন ও মো. বিল্লাল হোসেন। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
গ্রেফতার দুই জন রায়ের পরে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ওই আপিল বিচারাধীন থাকার সময় ২০১৮ সালে বিল্লাল এবং ২০২১ সালে সাখাওয়াত মৃত্যুবরণ করেন।
একাত্তরের ইসলামী ছাত্রসংঘ নেতা সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে যশোরের কেশবপুরের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার। অন্য আসামিরা ছিলেন এ বাহিনীর সদস্য।
সাখাওয়াতের নেতৃত্বে কেশবপুরের চিংড়া, বগা, ভাণ্ডারখোলা, নেহালপুর, হিজলডাঙ্গা, গৌরীঘোনা ও ভাল্লুকঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন তারা। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে এলাকার সংখ্যালঘুরাও দেশত্যাগে বাধ্য হন।
১৯৯১ সালে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে জামায়াত থেকে সংসদ নির্বাচত হন। সংসদ সদস্য থাকাবস্থায়ই ১৯৯৫ সালে তিনি জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির ধর্ম বিষয় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন তিনি। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করে পরাজিত হন সাখাওয়াত।
এরপর ২০০১ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। পরে বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এরপর ২০০৬ সালে বিকল্পধারায় যোগ দেন। পরে এলডিপি ও পিডিপি হয়ে তিনি এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।