ঘরে অসুস্থ স্বামী এবং ছোট এক মেয়ে। সংসারের হাল ধরার আর কেউ নেই। এ অবস্থায় স্বামীর ওষুধ এবং সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে বাঁশ-বেতের পণ্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। পঞ্চান্ন বছর বয়সী পারুল রানী তিন কন্যাসন্তানের মধ্যে দুইজনকে বিয়েও দিয়েছেন। তবে তার আফসোস, এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি।
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের হতদরিদ্র খগেন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী পারুল রানী। রোববার (১২ জুন) দুপুরে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বসতভিটা ছাড়া আমাদের আর কোনো সহায়-সম্পদ নেই। বসবাসের কোনো ঘরও ছিল না। তিন কন্যাসন্তান নিয়ে একটি ঝুপরি ঘরে বসবাস করতাম। সম্প্রতি এলাকার লোকজনের সহায়তায় ঘরটা কিছুটা মেরামত করা হয়েছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বড় মেয়ে মনিকা রানী ও মেঝ মেয়ে কনিকা রানীকে বিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এতদিন সংসারের ভরণপোষণ করতেন স্বামী খগেন্দ্র চন্দ্র। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। ফলে এখন কোনো কাজই করতে পারেন না। ছোট মেয়ে দীপ্তি রানী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। এ অবস্থায় অসুস্থ স্বামীর ওষুধ এবং ছোট মেয়ের পড়ার খরচ যোগাতে বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি করছি।
বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাঁশ কিনে ডালা, চালুন, খলইসহ গৃহস্থলির কাজের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করি। দিনে ৪-৫টির মতো পণ্য তৈরি করতে পারি। পরে সেগুলো বিক্রি করতে স্থানীয় বাজারে যাই। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে স্বামীর ওষুধ ও খাবার কেনা হয়।
পারুল রানী বলেন, এসব ডালা, চালুন ও খলই প্রতিটি ১০০ টাকা, ১৫০ টাকা ও ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ৫০০ টাকার বাঁশ কিনে ৭০০-৮০০ টাকার পণ্য বিক্রি করা যায়। এতে ২০০-৩০০ টাকার মতো লাভ হয়। শুধু অভাবের কারণে ঘর ছেড়ে বাজারে আসতে হয়। আগে আমার স্বামী এগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ভয়ে তাকে বাজারে পাঠাই না। কারণ কখন কী হয়ে যায়, সব সময় দুশ্চিন্তা কাজ করে। তাই আমি নিজেই বাজারে আসতে শুরু করি। এছাড়া করার কিছুই নেই।
সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি জানিয়ে পারুল রানী বলেন, বড় মেয়ে মনিকাকে ধার-দেনা করে কয়েক বছর আগে বিয়ে দিয়েছি। গত অগ্রহায়ণ মাসে কেন্দুয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও নারীনেত্রী কল্যাণী হাসানের সার্বিক সহযোগিতায় বাজার থেকে সাহায্য তুলে ৩০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে মেঝ মেয়ে কনিকা রানীকে বিয়ে দিয়েছি। ইচ্ছা ছিল ছোট মেয়ে দীপ্তি রানীকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় কিছু করব। কিন্তু ছোট মেয়ে দীপ্তি কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর মতো।
হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারের চাকা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। এই দুশ্চিন্তা আমাকে প্রতিদিন তাড়া করে। বেঁচে থাকতে কিছু সঞ্চয় করে যেতে পারব কি না জানি না।
এ বিষয়ে স্থানীয় কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম বাবুল বলেন, আমি অসহায় পারুল রানীর পরিবারের খোঁজ-খবর নেব। পরিষদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় সবই করব ইনশাআল্লাহ।