রাশিয়ার চলমান সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে উন্নত রকেট সিস্টেম সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মূলত শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনারা যাতে রাশিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারে সে জন্যই এই অস্ত্র পাঠাবেন তিনি।
বুধবার (১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে দূরপাল্লার এই অস্ত্র পাঠাবে ওয়াশিংটন। বুধবার এটি প্রকাশ করা হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে উচ্চ গতিশীল আর্টিলারি রকেট সিস্টেম সরবরাহ করছে যা ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে। মূলত রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে কিয়েভ ‘আশ্বাস’ দেওয়ার পরে সেগুলো পাঠানো হচ্ছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের মতামতে প্রকাশিত লেখায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসন কূটনীতির মাধ্যমে অবসান হবে। তবে ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে উল্লেখযোগ্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করতে হবে।
বাইডেন লেখেন, ‘আর এই কারণেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা ইউক্রেনীয়দের আরও উন্নত রকেট সিস্টেম এবং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করব। সেসব অস্ত্র ইউক্রেনকে তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে আরও সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত করার ক্ষমতা দেবে।’
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামরিক সহায়তার এই প্যাকেজটিতে গোলাবারুদ, কাউন্টার ফায়ার রাডার, বেশ কয়েকটি বিমান নজরদারি রাডার, অতিরিক্ত জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল এবং একইসঙ্গে অ্যান্টি-আরমার অস্ত্রও রয়েছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা অবশ্য মিত্র দেশগুলোর কাছে দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন। দেশটি এমন সব ক্ষেপণাস্ত্র চাচ্ছে যেগুলো ব্যবহার করে কয়েকশ মাইল দূরে হামলা চালানো সম্ভব। আর এ ধরনের অস্ত্র হাতে এলেই কেবল তিন মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের মোড় ঘুরতে পারে বলে আশা কিয়েভের।
এর আগে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ইউক্রেনের এমন কোনো রকেট সিস্টেম পাঠাতে যাচ্ছি না যা ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী রাশিয়ার ভেতরে আঘাত হানতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট অবশ্য কোনো সুনির্দিষ্ট অস্ত্র পাঠানোর কথা অস্বীকার করেননি। বরং সেগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে সে বিষয়েই শর্ত আরোপে আগ্রহী তিনি।
আরও ভালো করে বললে, রুশ আগ্রাসন থেকে আত্মরক্ষায় ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু রাশিয়াকে আক্রমণ করতে ব্যবহার করতে পারে এমন অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহের বিরোধিতা করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক চলা রাশিয়ার সর্বাত্মক এই হামলা সম্প্রতি গড়িয়েছে চতুর্থ মাসে।
রাশিয়া অবশ্য তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।
রাশিয়ার এই হামলায় ইউক্রেনে হাজারও মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষের তীব্রতায় বাড়ি-ঘরে হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।