পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের ‘মুক্তি’ রাশিয়ার প্রধান বা ‘নিঃশর্ত অগ্রাধিকার’ বলে মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। রোববার (২৯ মে) এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক চলা রাশিয়ার সর্বাত্মক এই হামলা সম্প্রতি গড়িয়েছে চতুর্থ মাসে।
রাশিয়া অবশ্য তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে রোববার সাক্ষাৎকার দেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে তিনি তিন মাসেরও বেশি সময় চলা রাশিয়ার এই সামরিক অভিযানের যুক্তিকে সমর্থন করে বলেন, প্রতিবেশী এই দেশটিকে ‘অসামরিককরণ’ করার লক্ষ্যেই এই আক্রমণ পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি ক্রেমলিনের ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সেই উক্তিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন যে, (ইউক্রেনে) রাশিয়া একটি ‘নব্য-নাৎসি শাসনের’ বিরুদ্ধে লড়াই করছে। একইসঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অসুস্থ হওয়ার জল্পনাও অস্বীকার করেছেন তিনি। মূলত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকারী এই মানুষটি গত অক্টোবর মাসে ৭০ বছরে পা দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন নিয়মিতভাবে জনসমক্ষে উপস্থিত হচ্ছেন উল্লেখ করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে বিবেকবান ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে কোনো ধরনের অসুস্থতা বা অসুস্থতার লক্ষণ দেখতে পাবেন।’
ইউক্রেন যুদ্ধে শহুরে এলাকায় ধ্বংসাত্মক কামান এবং রকেট আক্রমণসহ যুদ্ধের মানবিক মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বেসামরিক অবকাঠামোতে আক্রমণ ও হামলা এড়াতে রুশ সেনাদের স্পষ্টভাবে কঠোর আদেশ দেওয়া রয়েছে।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক বাহিনী আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ইউক্রেনে কমপক্ষে ৪ হাজার ৩১ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ৪ হাজার ৭৩৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া রুশ হামলায় প্রাণ হারানো বা আহত হওয়া যোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা অজানা।
এছাড়া তীব্র রুশ আক্রমণের মুখে ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এবং ছোট ছোট শহরসহ অন্যান্য শহরগুলো কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
ল্যাভরভ বলছেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের কাছ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে মুক্ত করা মস্কোর নিঃশর্ত অগ্রাধিকার।’