জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সেই কলেজছাত্রীকে (২১) উত্ত্যক্ত ও বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতেন এলাকার দুই যুবক। ওই ছাত্রীর বড় ভাই তাদের শাসালে সেই আক্রোশ থেকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ছাত্রীটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে হত্যা করেন তারা। এ ঘটনায় বুকে আঁচড়ের ক্ষত দেখে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (৮ মে) দুপুর ১টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- পাঁচবিবি থানার মাঝিনা গ্রামের শংকর মহন্তের ছেলে রনি মহন্ত (৩০) ও আয়মাপাড়া গ্রামের খোরশেদ মন্ডলের ছেলে জাহিদ হাসান ওরফে কামিনি জাহিদ (৩২)।
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা জানান, ওই ছাত্রীর মা ২০০৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং বাবা ঋণ খেলাপির কারণে জেল হাজতে আছেন। তার ভাই মোস্তাক হোসেন স্ত্রী, সন্তান ও বোনকে নিয়ে মাঝিনা গ্রামে বসবাস করেন। গত ৫ মে মোস্তাক স্ত্রী-সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। বাড়িতে কেউ না থাকায় ৬ মে ভিকটিম তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে রাতের খাবার খান। খাবার শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুই ভাতিজিকে নিয়ে একই ঘরে থাকেন। এরপর মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে তিনি পাশের ঘরে যান। দুই ভাতিজি এক ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে।
এ সুযোগে তাদের বাড়িতে কাঠের কাজ করা রনি সহকর্মী জাহিদকে নিয়ে রাত ১টার দিকে দেয়াল টপকে বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং দেখেন ওই ছাত্রীর শোবার ঘরের দরজা খোলা। তাকে বিছানায় কাঁথা গায়ে মোবাইলে কথা বলতে দেখে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন তারা। এরপর সুযোগ বুঝে রাত ২টার দিকে তারা ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করেন। এতে একপর্যায়ে ভিকটিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন। আসামিরা ভিকটিমকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে পুনরায় দেওয়াল টপকে পালিয়ে যান।
প্রেস বিফ্রিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) ফারজানা হোসেন, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (সিআইডি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোসফেকুর রহমান, পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৭ মে) সকালে জেলার পাঁচবিবি উপজেলার মাঝিনা গ্রামের নিজ বাড়ির শোবার ঘরে খাটের ওপরে অর্নাস প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর মরদেহ দেখতে পান প্রতিবেশীরা। পরে তারা পুলিশকে খবর দেন। থানা পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বাড়িতে অবস্থান নেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।