মদিনার মসজিদে নববিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও তার সফরসঙ্গীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ায় কয়েকজন পাকিস্তানি হজযাত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি পুলিশ। পাকিস্তানে সৌদি আরবের দূতাবাস এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে মসজিদে নববির পবিত্রতা ক্ষুন্ন করার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই হজযাত্রীদের এবং বর্তমানে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে কতজন পাকিস্তানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি সৌদি দূতাবাস।
বৃহস্পতিবার তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে প্রতিনিধিদলসহ সৌদি আরব সফরে গিয়েছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব ও শাহজাইন বুগতিও রয়েছেন এই প্রতিনিধিদলে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার পর এটিই শেহবাজ শরিফের প্রথম বিদেশ সফর।
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শুক্রবার শেহবাজ শরিফ যখন তার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মদিনার মসজিদে নববিতে নামাজ পড়তে গিয়ে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি হজযাত্রীর তোপের মুখে পড়েন তিনি ও তার দলের সদস্যরা। ওই হজযাত্রীরা শেহবাজ শরিফের উদ্দেশে ‘চোর, চোর’ স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ সম্পর্কিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শেহবাজ শরিফকে ‘চোর’ বলার পাশপাশি প্রতিনিধি দলে থাকা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেবের উদ্দেশে অশালীন স্লোগান দিতে থাকেন তারা এবং শাহজাইন বুগতিকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন।
অবশ্য তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সক্রিয় তৎপরতার কারণে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষ্যদর্শী।
শুক্রবার রাতে এক ভিডিওবার্তায় মরিয়ম আওরঙ্গজেব পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ইঙ্গিত করে বলেন, মসজিদে নববির ঘটনায় কার ‘ইন্ধন’ রয়েছে তা সবার কাছেই স্পষ্ট।
‘এই ঘটনা যার ইন্ধন রয়েছে, তার নাম আমি উচ্চারণ করতে চাই না, কারণ এই পবিত্রভূমিতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কোনো ইচ্ছা আমার নেই।’
এক টুইটবার্তায় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি— এ ব্যাপারে যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মসজিদে নববির এই অপ্রীতিকর ঘটনা আমাদের পুরো জাতির জন্য লজ্জার।’
তিনি আরও বলেন, দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে সৌদি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও করা হয়েছে।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের উলেমা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তাহির মাহমুদ আশরাফি বলেছেন, রমজান মাস মসজিদে নববির পবিত্রতা রক্ষা করা সকল মুসলিমের ঈমানি দায়িত্ব।
গত ১১ এপ্রিল ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়া পার্লামেন্টের সাবেক বিরোধী নেতা শেহবাজ শরিফ ও তার ছেলে হামজা শরিফের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে শেহবাজ শরিফ বরাবরই এ অভিযোগকে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করে আসছেন।
ইমরান খানের রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব আসাদ ওমর এক বার্তায় বলেছেন, ধর্মীয় তীর্থস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করা সবার জন্যই অত্যাবশ্যকীয়।