ঢাকা: বিএনপি আমলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবস্থা এমন জরাজীর্ণ ছিল যে বিমানের সিটে বসলে গায়ে এসির পানি পড়তো।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলাকা ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এই জরাজীর্ণ বিমানে যখন চড়তাম, এখনও মনে আছে সেখানে ভাল করে কোনো গানও শোনা যেত না। আর জানালার পাশের সিটে বসলে ঝর ঝর করে গায়ে এসির পানি পড়ত। কোন মতে কাপড় দিয়ে সেই পানি বন্ধ করা হত। এমনই দুর্দশা ছিল আমাদের বিমানের। বরং আমি সবসময় আমাদের পাইলটদের ধন্যবাদ জানাতাম, এ ধরনের একটা অবস্থায় তারা যে সাহস করে বিমান চালাচ্ছে। এটাই আমার কাছে বড় জিনিস মনে হত।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি, তখন দেখি তারা নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। চরম লোকসান আর অব্যবস্থাপনায় বিমান মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিমান বহরে যুক্ত হওয়া বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উড়োজাহাজের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে বর্তমানে চারটি বৃহৎ পরিসরের বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর, চতুর্থ প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত চারটি ৭৮৭-৮ ও দুটি ৭৮৭-৯ সহ মোট ছয়টি ড্রিমলাইনার, ছয়টি ৭৩৭-৮০০ এবং পাঁচটি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। এই ২১টি উড়োজাহাজ নিয়ে বিমান চলছে। যার মধ্যে ১৮টিই বিমানের নিজস্ব মালিকাধীন।
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ প্রজন্মের বিমান সংযুক্ত হওয়ায় যাত্রীদেরকে আকাশে ওয়াই-ফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ইনফ্লাইট বিনোদন সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরগুলোতে পার্শ্ববর্তী শহরের যাত্রীদের আরামদায়ক গমনাগমনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মনোরম কোচ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিমানে উঠে বেকার বসে থাকতে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজও চালাতে পারবেন। সেই সুবিধাটাও আমরা করে দিয়েছি। করোনা মহামারিতে বিমানকে প্রণোদনা হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। সেটা তারা কাজে লাগিয়েছে।
টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, আমাদের সবসময় একটা লক্ষ্য ছিল যে আমরা নিজেদের বিমান ব্যবহার করব। আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে বিমানের তখন কী বিধ্বস্ত অবস্থা ছিল। তাই ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন উদ্যোগ নেই। যদিও তখন বেশ আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছিল। তার মাঝেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম। পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উন্নয়নে আরও কিছু উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ফ্লাইট চালু করি।
২০০৯ সালে ফের সরকারে আসার পর বিমানের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কেবল ঢাকায় একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল। কিন্তু একটা স্বাধীনে দেশে কেন একটা মাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকবে? তাই সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করি।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রাজশাহী বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর বন্ধই করে দেয়। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে পুনরায় সেগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিমানকে আরও লাভজনক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের কার্গো হ্যান্ডেলিং এবং বিমান হ্যান্ডেলিং সবকিছু আন্তর্জাতিক মানের হোক। যাত্রীরা যেন কষ্ট না পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে সেটাই আমরা চাই।
আরও দুটি কার্গো বিমান ক্রয়ের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার্গো সার্ভিস চালু থাকলেই কিন্তু বিমান আরও লাভজনক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কাজেই অন্ততপক্ষে দুটো কার্গো বিমান ক্রয় করা খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি। যথাযথ উদ্যোগ নিলে কার্গো বিমান ক্রয় করা সম্ভব।
হয়রানিমুক্ত যাত্রী সেবা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, প্রবাসীরা দেশের জন্য কাজ করে এবং প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি লোক প্রবাসে আছে। তারা ছুটির সময় দেশে আসে। সেই কথাটা বিবেচনা করে তারা যেন কোন রকম হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে। যদিও এখন সেবাটা অনেক উন্নত হয়েছে, তারপরও আরও উন্নত হোক সেটা আমরা চাই।
কাস্টমস সিস্টেমকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যখন বিদেশ থেকে আসে হয়তো কিছু পণ্য কিনে নিয়ে আসতে চায়। তারা যেন কোনো হয়রানির মধ্যে না পড়ে। যদি পুরো ডিজিটাটাইজড হয়ে যায়, তাহলে খুব সহজেই যাত্রী সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। সেই বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিমানের রুট বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিমানটা আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে চলে। যে জন্য এই জায়গাটায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলো অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা আরও বাড়ানো দরকার।
এ সময় নতুন কেনা উড়োজাহাজগুলো সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।
বলাকা ভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো.মাহবুব আলী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।