ঢাকা: দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিন্ম ও মধ্যম আয়ের মানুষ। এমতাবস্থায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেও মানুষ এর কারণ জানতে চাইছেন।
৯৯৯ সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত সহস্রাধিক ফোন এসেছে ৯৯৯-এ। বেশিরভাগেরই প্রশ্ন, তেল-সবজির দাম কমবে কবে? আসন্ন রমজানে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে কি-না কিংবা প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ কি?
অনেকেই ফোন দিয়ে জানতে চাইছেন, কোন বাজারে কিছুটা কমদামে পণ্য পাওয়া যাবে? কোথাও বেশি দাম চাওয়া হলেও ৯৯৯-এ ফোন করে অভিযোগ জানাচ্ছেন ‘দিশেহারা’ জনসাধারণ।
সাধারণ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশি সেবা দিতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ পরিচালিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এ সংক্রান্ত অনেক ফোন পাচ্ছেন তারা।
৯৯৯-এ আসা জানুয়ারি মাসের ফোনকল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, জানুয়ারিতে ৯৯৯-এ ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৭২৫টি কল এসেছে। এর মধ্যে ৯৯৯ সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ১ লাখ ২৭ হাজার ৩১০টি কল আসে। এসব কলের অধিকাংশই দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত।
এছাড়া, ১ হাজার ৯৮২টি দুর্ঘটনা সংক্রান্ত, অগ্নিকাণ্ডের ১ হাজার ১৪১ টি, মারামারি সংক্রান্ত ৫ হাজার ২৫২টি, শব্দ দূষণ নিয়ে ২ হাজার ৯১১টি, জমি দখল সংক্রান্ত ১ হাজার ৭০৩টি, পারিবারিক সমস্যা সংক্রান্ত ১ হাজার ৩৩৫টি, জুয়া সংক্রান্ত ৬২৮টি কল এসেছে।
নারী নির্যাতন সংক্রান্ত ১ হাজার ২২৮ টি, ৯২৫টি চুরির ঘটনা, মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি ৮৯৩টি, ৭৫৮টি অভিযোগ মাদক সংক্রান্ত ৫১৯টি কল এসেছে।
৯৯৯-এর পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, ৯৯৯ মূলত পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত কলগুলোর বিস্তারিত হিসেব রাখে। তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত অনেক কল আসছে। বেশিরভাগই জিজ্ঞেস করছেন, জিনিসপত্রের এত দাম, তারা কী খাবেন, কোথায় যাবেন বা কীভাবে চলবেন?
সেসব কলারকে আর্থিক সহায়তার জন্য জাতীয় কল সেন্টার ‘৩৩৩’-এ কল করতে বলা হয়। আর কেউ যদি মনে করেন তাদের কাছ থেকে দোকানদাররা দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত রাখছেন সেক্ষেত্রে তাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ৯৯৯ জরুরি সেবা দিয়ে থাকলেও জনসাধারণের সুবিধার্থে তারা কলারদের নানা ধরনের পরামর্শও দিয়ে থাকেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে দিশেহারা দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। করোনা পরিস্থিতির প্রভাবে অনেকেরই জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ওপর দ্রব্যমূল্যের এই অস্বাভাবিক বাড়তির কারণে জরুরি সেবার নাম্বারেও মানুষজন এ সংক্রান্ত বিষয় জানতে চাইছেন।
রাজধানীর বাজারদর অনুযায়ী, বর্তমানে সবজি ভেদে দাম ৫০-১২০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা, রসূন ১২০ টাকা, ভোজ্যতেল ১৭০ টাকাসহ প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দাম বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে ডিম, মাছ ও মাংসের।
এদিকে চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর সরকারি সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ এর পর থেকে আবার ৩০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্যটি আমদানি করতে হবে। চিনির ওপর আরোপিত শুল্ক সুবিধা না বাড়ালে আগামী রোজায় চিনির দাম সেঞ্চুরি (১০০ টাকা) পার হতে পার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দামের কারণে সম্প্রতি কম দামে পণ্য বিক্রয় করা টিসিবির ট্রাক ঘিরে ক্রমেই বাড়তি ভিড় দেখা যাচ্ছে। টিসিবির ট্রাক লক্ষ্য করে স্বল্প আয়ের মানুষজনের দৌড়ানোর দৃশ্যও এখন প্রায় নিয়মিত। যা নিয়ে সামাজিক যোগাগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।