মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে জাতিসংঘের পাঁচ কর্মী অপহরণের শিকার হয়েছেন। ফিল্ড মিশন শেষে এডেনে ফেরার পথে তারা অপহৃত হন। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘ এই তথ্য সামনে এনেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ইয়েমেনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তার মুখপাত্র রাসেল গেকিই জানিয়েছেন, শুক্রবার জাতিসংঘের ওই পাঁচ কর্মী ইয়েমেনে দক্ষিণাঞ্চলীয় আবিয়ান এলাকা থেকে অপহৃত হন।
তিনি আরও জানিয়েছে, অপহৃত কর্মীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছে জাতিসংঘ।
অন্যদিকে রাশিয়ার বার্তাসংস্থা স্পুটনিক নিউজ জানিয়েছে, ইয়েমেনে অপহরণের শিকার জাতিসংঘের কর্মীর সংখ্যা ছয় জন। এছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইয়েমেনি সন্ত্রাসীরা এই অপহরণের ঘটনার পেছনে রয়েছে বলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রুশ এই বার্তাসংস্থাটি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেন ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। বিদ্রোহী বাহিনী দেশটির কেন্দ্রীয় শহর মারিব এবং উপকূলীয় শহর হোদেইদাকে টার্গেট করেছে। অন্যদিকে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট রাজধানী সানা এবং অন্যান্য বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিমান হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ।