সিএনএম প্রতিবেদকঃ
মাদারীপুর শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা গ্রামে সুমা আক্তার (২০) ও মোহাম্মদ খালাসী (২৪) নামের দুই প্রতিবন্ধীর মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (১২ মার্চ) দুপুরে এ ঘটনা হয়। এ নিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ বিষয়টিতে সাদরে গ্রহণ করেন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা গ্রামের সিরাজ শিকদার ও মমতাজ বেগম দম্পতির সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সুমা আক্তার জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও একই গ্রামের আলী আহম্মদ মৃধাকে মামা বলে ডাকত সুমা। মামা আলী আহম্মদের বাড়িতে সুমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আর আলী আহম্মদের বাড়িতে থেকে এলাকায় বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে রঙের কাজসহ দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বাবুরচর গ্রামের নোয়াব আলী খালাসীর ছেলে মোহাম্মদ খালাসী। তিনি জন্ম থেকেই কিছুটা সহজ-সরল অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন।
এক পায়েও সমস্যা থাকায় অনেকটা খুঁড়িয়েই হাঁটাচলা করেন তিনি। আলী আহম্মদের বাড়িতে সুমার যাতায়াতকালে মোহাম্মদ খালাসীর সঙ্গে সুমার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। বিষয়টি এলাকাবাসী বুঝতে পেরে তারা বিয়ে করবে কি না জানতে চান। এতে দুই প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণী সম্মতি দেয়। পরে ছেলের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে দুজনের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ে উপলক্ষে নির্মাণ করা হয় গেট, বড় প্যান্ডেল, বাজনা, মাইকসহ বিভিন্ন আয়োজন। দেড়শ’ শতাধিক অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
মামা আলী আহম্মদ মৃধা দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ্চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদারসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সুমাদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করে। পরে কাজি ডেকে বিয়ের কার্য সম্পন্ন করা হয়। তাদের পছন্দকে সম্মান জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর এই উদ্যোগে খুশি নবদম্পতি। ভালোবাসার স্বীকৃতি পেয়ে তারা কৃতজ্ঞতা সাধারণের মতো জানাতে না পারলেও তাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস।
বর মোহাম্মদ খালাসী বলেন, দুজন-দুজনকে বিয়ে করতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে।
কনে সুমা আক্তার বলেন, খুব ভালো লাগছে। এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় পছন্দের মানুষকে পেয়েছি।
শিবচর উপজেলার পাচ্চর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, সকলে মিলে প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীর বিয়ে দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। শুধু মনোবল থাকলেই এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব।
মাদারীপুরের সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক তাপস ফলিয়া জানান, সদ্য বিয়ে হওয়া প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীর পরিবার থেকে সহযোগিতা চাওয়া হলে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।