পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ লাইন। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে টিকিট কাটার জন্য অনেকেই সেহেরির পর পরই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায়ই মুঠোফোনে অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট কাটারও চেষ্টা করছেন।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের ২৬টি কাউন্টারে একসঙ্গে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে একটি কাউন্টের শুধুমাত্র নারী ও প্রতিবন্ধীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এদিকে একই সময় কাউন্টারগুলোর পাশাপাশি অনলাইনেও ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
রাজশাহীগামী ধুমকেতু ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের লাইনের সিরিয়ালে ৯৩ জনের পেছনে অপেক্ষা করছিলেন মনছুর আহমেদ নামের। বেসরকারি চাকরিজীবী এই ব্যক্তি বলেন, সেহেরির পরেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। যেহেতু পরিবারের সদস্য ও শিশুদের নিয়ে রাজশাহী যাব, তাই আমার এসি টিকিট প্রয়োজন। যত জনের পেছনে আমার সিরিয়াল সে অনুযায়ী এসি টিকিট পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই ৮টা বাজার পর থেকেই লাইনে দাঁড়ানো অবস্থাতেই অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছি মোবাইলে।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের লাইনে দাঁড়ানো তোফাজ্জল হোসেনও মোবাইলে চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনলাইনে টিকিট কাটার। আলাপে তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়ালেও এসি টিকিট পাওয়ার আশায় অনলাইনে ননস্টপ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে সার্ভার ডাউনের কারণে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছি না। যদি কোনোভাবে অনলাইনে টিকিট পেয়ে যাই তখন টিকিটের লাইন ছেড়ে চলে যাব।
টিকিট প্রত্যাশী শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাখাওয়াত হোসেন। প্রতিবারের মতো এবারও পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি খুলনায় ঈদ করবেন। আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে খুলনার একটি প্রথম শ্রেণির টিকিট নিতে চান তিনি।
শাখাওয়াত বলেন, ভেবেছিলাম ঈদ যাত্রার প্রথম দিন ২৭ এপ্রিলের টিকিট ভালোভাবেই পেয়ে যাবো। কিন্তু আমার মতো আরও অনেকেই ভোরে এসে কাউন্টারে অপেক্ষা করছেন।
ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার আগাম টিকিট পেতে যারা এসেছেন তাদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। সবাই দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষারত মানুষের কেউ কেউ সেহরি করেই চলে এসেছেন কাউন্টারে।
সাবরিনা সারজি নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থাী বলেন, ক্যাম্পাস আগেই ছুটি দিয়েছে। তবে একটা পার্টটাইম জব করায় দেরিতে বাড়ি ফিরছি। আজ টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন হলেও টিকিট পাবো বলে আশা করছি। আমি সেহরি খেয়েই চলে এসেছি, ঘুমিয়ে গেলে হয়তো আর পাবো না এজন্যই। কষ্ট যা হবার আজ হোক, যাত্রা যেন ভালো হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ এপ্রিলের টিকিট দেওয়া হচ্ছে আজ (২৩ এপ্রিল)। একইভাবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট পাওয়া যাবে ২৪ এপ্রিল (রোববার), ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এপ্রিল (সোমবার), ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) এবং ১ মের টিকিট ২৭ এপ্রিল (বুধবার) বিক্রি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এবারের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে আগামী ৫ মে থেকে। ৫ মের টিকিট বিক্রি হবে ১ মে।