তিনি বলেন, কি কারণে তারা সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায়। আসলে তারা জনগণকে এই সরকার যে সব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে-তা থেকে বঞ্চিত করতে চায়। এটাই কি তাদের আসল উদ্দেশ্য?
বুধবার গণভবন থেকে কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত সপ্তাহ-ব্যাপী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ড. এম এ জলিল, মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মানু, হারুন অর রশীদ প্রমুখ। এছাড়া কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দেশের কোনো সংকটপূর্ণ মুহূর্তে কখনোই জনগণের পাশে থাকেন না। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তারা অনেক বেশি ব্যস্ত থাকেন সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তুলতে। মি. মান্না, ড. কামাল হোসেন, কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম দলগুলো আওয়ামী লীগ সরকারকে উচ্ছেদ করার আন্দোলন গড়ে তুলতে এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কি দোষ করেছে যে তারা সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতিহার দিয়েছে এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ওই ইশতিহারে আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের বারবার নির্বাচিত করায় আমি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। নির্বাচনী ইশতিহার অনুযায়ী দেশ তার লক্ষ্য অর্জন করেছে। যে সময় আমরা আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী করছি, সে সময়েই আমাদের দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি।
সরকার প্রধান বলেন, আমার প্রশ্ন হলো-তারা কি দেশের এই ক্রম-উন্নয়ন পছন্দ করছে না? মনে হচ্ছে সে জন্যই তারা এই সরকারের উচ্ছেদ ঘটাতে চায়। সরকার দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং তৃণমূল পর্যায়ের ও গ্রামীণ এলাকার মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে গৃহীত সরকারের পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছে। এ জন্যই তাদের শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা প্রয়োজন। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন-আমাদের অপরাধটা কি? সরকার কৃষি ইস্যুতে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে-যাতে করে দেশ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ইস্যুর পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে অধিকতর ইতিবাচক ফলাফল পেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকার দেশের গণমানুষের কল্যাণে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দেশের কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি ও কৃষকদের ব্যাপারে অনেক বেশি আন্তরিক। কৃষকরা যেন ন্যায্য মূল্যে তাদের তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পেতে পারেন, সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মাথা পিছু আয় বেড়েছে। প্রায় শত ভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে এবং ভূমিহীন লোকদের ঘর ও জমি দেয়া হচ্ছে। ঘর ও জমি পেয়ে লোক ভাল আছে এবং তারা নিজের পায়ে দাড়াচ্ছে। এটা কি আওয়ামী লীগ সরকারের অপরাধ, তাহলে কেন এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে? সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রথম
স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে তরুনরা গ্রামে বসেই বিদেশী চাকরি করছে ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আট মাস আগে পায়রা ১৩০০ গোওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এতে ৯শত কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা খুশি হতে পারেনি। এই সফলতায় তারা দুঃখ পেয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, এতবড় প্রকল্পের কি প্রয়োজন ছিল। সারাদেশে একশত বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অর্থনৈতিক জোন করার কথা ভাবছি। দেশের প্রতিটি এলাকায় সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করছি। এতে জনসাধারণের চলাচল সহজ হয়েছে, অথচ তারা এ সব পছন্দ করে না।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার
কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। এতে বিনা মূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আধুনিক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকার দরিদ্র পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছে। সরকার কৃষক শ্রমিক ও গণমানুষের মুখে হাসি ফুটাতে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের কি দোষ, তারা কেন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা জনগণের অর্থ লুট করেছে। মানুষ এবং আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হত্যা করেছে পূর্ণিমা, মাহিমাসহ অনেকের ওপর নির্যাতন করেছে। জনগণ কি ২০১৩ ও ২০১৫ সালের তাদের নৃশংসতা ভুলে গিয়েছে? বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের একটি মহল ষড়যন্ত্র করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে।