ইব্রাহিম হোসেন নিজেকে পরিচয় দেন তান্ত্রিক হিসেবে। গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন সময় মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তার দাবি, ঘরে দুটি বোতলে বন্দি রয়েছে জিন। র্যাব তাকে ধরতে গেলে তিনি জিনের ভয় দেখান।
জিনের ভয় দেখিয়েও অবশ্য রক্ষা পাননি ইব্রাহিম। র্যাব তাকে আটক করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর থানার বৌ বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মঙ্গলবার ইব্রাহিম হোসেনকে আটক করেছে র্যাবের একটি দল। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার।
তিনি জানান, আটক করতে গেলে তার ঘরে থাকা দুটি সাদা বোতল দেখিয়ে ইব্রাহিম বলেন, এগুলোতে জিন বন্দি অবস্থায় আছে। বোতলে হাত দিলে র্যাব ধ্বংস হয়ে যাবে। পরে র্যাব বোতল দুটি জব্দ করে।
নুরুল আবছার জানান, ফরহাদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দুই বছর ধরে মানসিক বিকারগ্রস্ত। তার পরিবার প্রতিবেশীর পরামর্শে তাকে ইব্রাহিমের কাছে নিয়ে আসে। ইব্রাহিম চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করার আশ্বাস দেন।
ইব্রাহিম ফরহাদুলকে তাবিজ ও পানি পড়া দেন এবং জানান তার ভাগ্যে বহু মূল্যবান গুপ্তধন রয়েছে। এ গুপ্তধন উদ্ধার করতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন নিজেকে তান্ত্রিক পরিচয় দেওয়া ইব্রাহিম। গুপ্তধন উদ্ধারের জন্য কিছু সামগ্রী কিনতে হবে বলে ফরহাদুলের পরিবারকে জানান তিনি।
ফরহাদুলের পরিবার সরল মনে ইব্রাহিমকে নগদ দুই লাখ টাকা দেয়। কিছুদিন পর ইব্রাহিম জানান, গুপ্তধন উদ্ধারে আরও টাকা খরচ হবে। এই বলে তিনি আরও দেড় লাখ টাকা নেন। পরে ফরহাদুল ও তার পরিবারকে নিয়ে বাড়ির পাশে একটি খোলা মাঠে মাটি খুঁড়ে একটি ছোট তালা, একটি ছোট মূর্তি ও তিনটি পিতলের ঘটি বের করে দেখান ইব্রাহিম। তিনি বলেন, এই হলো গুপ্তধন। আরও ধৈর্য ধরলে আরও পাওয়া যাবে।
এভাবে ফরহাদুলের পরিবারের কাছ থেকে মোট পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ইব্রাহিম।
গতকাল ১৯ এপ্রিল ফরহাদুলের পরিবার ইব্রাহিমের বাসায় গিয়ে সব টাকা ফেরত চায়। ইব্রাহিম ফরহাদুলের পরিবারের সদস্যদের বেঁধে রাখার জন্য লোকজন ডাকেন এবং তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দিয়ে ধ্বংস করার হুমকি দেন। তখন রাস্তার পাশে র্যাবের একটি টহলগাড়ি দেখে পরিবারটি বিষয়টি র্যাব সদস্যদের জানায়। এরপর র্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে ইব্রাহিমকে আটক করে।
ইব্রাহিমের কাছ থেকে জাদুটোনায় ব্যবহৃত মানুষের চুল, শরীরের অংশ, কথিত ডাইনির ঠ্যাং, আরবি লেখা সম্বলিত মানুষ সদৃশ পুতুল, প্রেস লেখা আইডি কার্ড, প্রতারণায় ব্যবহৃত নকল পুরাকীর্তি, প্রতারণায় ব্যবহৃত মৃগনাভি, মরিয়ম ফুল ইত্যাদি জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তা নুরুল আবছার।
তিনি বলেন, ইব্রাহিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি একজন ভুয়া কবিরাজ। তাবিজ, পানি পড়াসহ বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে অসহায় নারীদের নিয়ে এসে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করেন। টাকা নেওয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেছেন ইব্রাহিম।