বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৫:১০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
"ফটো সাংবাদিক আবশ্যক" দেশের প্রতিটি থানা পর্যায়ে "ক্রাইম নিউজ মিডিয়া" সংবাদ সংস্থায় ১জন রিপোর্টার ও ১জন ফটো সাংবাদিক আবশ্যক। আগ্রহী প্রার্থীরা  যোগাযোগ করুন। ইমেইলঃ cnm24bd@gmail.com ০১৯১১৪০০০৯৫

মহাসড়ক বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ!

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২২, ৪.৫০ পিএম
  • ১৫৫ বার পড়া হয়েছে

সরকারি জমি বন্ধক রেখে দুই দফায় ব্যাংক থেকে নেওয়া হয় ১৫ কোটি টাকার ঋণ। সেটি ধরা পড়লে দলিল সংশোধন করে বন্ধক জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে আবার ব্যাংকে জমা দেন ঋণগ্রহীতা। সংশোধিত দলিলের জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গিয়ে ব্যাংক জানতে পারে সেটিও ভুয়া। একটি হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, সংশোধিত যে দলিলটি জমা দেওয়া হয় সেটির প্রকৃত মালিক জামির আলী। ২৭ শতাংশ ওই জমি দখলে নিতে একাধিকবার তার ওপর হামলা ও হত্যা চেষ্টা চলে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অভিযোগ করলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাড্ডা থানার মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিল সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। ভিকটিমকে নিজ জমি থেকে জোরপূর্বক উৎখাত করার উদ্দেশে প্রতারক গোলাম ফারুক ও তার প্রধান সহযোগী ফিরোজ আল মামুনসহ অন্যরা গত ২৬ মার্চ ও ৬ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশে হামলা করে।

dhakapost

ওই ঘটনায় ভিকটিম আদালতে একটি নালিশী আবেদন করেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বাড্ডা থানাকে এটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেন। এ বিষয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়। র‌্যাব ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত রাতে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎকারী এবং হত্যা চেষ্টা মামলার প্রধান আসামি গোলাম ফারুক ও ফিরোজ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে র‌্যাবকে তথ্য দিয়েছে। মহাসড়কের জমি কেনা-বেচা করে প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকে বন্ধক রেখে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্যও দিয়েছে তারা।

২০২১ সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রি, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রির চেষ্টার ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। ওই ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয় তদন্তপর্ষদ গঠন করে। তদন্তে একটি প্রতারক চক্রের মহাসড়ক শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমি কয়েকটি সরকারি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে ব্যক্তি মালিকানায় নিবন্ধন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নেওয়ার তথ্য উঠে আসে। যদিও এসব জমি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কর্তৃক অধিগ্রহণ করা।

গাড়ি আমদানি ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণা শুরু

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার গোলাম ফারুক জানান, তিনি ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকি সম্পত্তি ছাড়া এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করেন। বিদেশি ব্যাংকের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাকে ৭ কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ দিলে তিনি সরকারি জমিকে অসদুপায়ে ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করেন।

dhakapost

অধিগ্রহণের আগের জমির মালিককে খুঁজে নামমাত্র মূল্যে ক্রয়

১৯৪৮ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের অধিগ্রহণ হওয়ার আগের জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন। জালিয়াতির সাহায্যে তিনি ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন। পরে ওই দলিলমূলে তৎকালীন মালিকের ছেলের কাছ থেকে গ্রেপ্তার গোলাম ফারুক তার স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় জমি কিনে আরেকটি দলিল তৈরি করেন। একই বছর তার স্ত্রীর নামের দলিলটি নিজ নামে করে নেন। যার সাফ কবলা দলিল নম্বর ৮৮৮০।

মহাসড়কের জমি নিজের দেখিয়ে ব্যাংক লোন

জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল ও মহাসড়কের জমিকে নিজের দেখিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক দেন। এজন্য তিনি আরও ১৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেন। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশে বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রি করার নোটিশ জারি করলে ব্যাংক সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায় ওই জমিটি সরকারি সম্পত্তি।

পরে তিনি দলিল সংশোধন করে আগের বন্ধক জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে মামলার বাদীর ও ভুক্তভোগী জামির আলীর জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করেন। তখন ব্যাংক সেই জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গিয়ে জানতে পারে সেটিও ভুয়া।

dhakapost

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে জমি জমা সংক্রান্ত, প্রতারণা, হত্যাচেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতির অপরাধে রাজউক কর্তৃক একটি, বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চারটি ও পাবলিক বাদী তিনটিসহ মোট আটটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার ফিরোজ আল মামুন মূল অভিযুক্ত গোলাম ফারুকের সব অপকর্মের অন্যতম সহযোগী। তিনি উত্তরা এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ বিস্তারে কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী জামির আলী বলেন, আমার উত্তরার ২৭ শতাংশ জমিটি গ্রেপ্তার ফারুক দখল করার জন্য পাঁয়তারা করে আসছিল। তাদের কাছে ওই জমির কোনো দাগ-খতিয়ান নেই। ওই জায়গা বন্ধক দিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে ১৫ কোটি টাকা লোন নিয়েছে সে। আমার অনুপস্থিতিতে আমার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে সে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে অভিযোগ করলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। ফারুক নকল দলিল থানায় দেখিয়েছে। ফারুক আমাকে বলে— প্রশাসন বলেন পুলিশ বলেন কোর্ট বলেন সব খরিত করেছি। আমার সঙ্গে পারবেন না। হয় ১ কোটি টাকা দেন, না হয় জমির মায়া ছেড়ে দেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2015-2025
Theme Developed BY ThemesBazar.Com