বুধবার ভোর ৪টা। রংপুর পুলিশ লাইন্স ও জেলা পরিষদের প্রবেশ ফটকের সামনে শত শত ছেলে-মেয়ে। তখন চারপাশ নিস্তব্ধ, ঘুম ভাঙেনি নগরবাসীর। অথচ নির্ঘুম রাত কাটছিল শত শত চাকরি প্রত্যাশীর। পুলিশ লাইন্সের প্রবেশ ফটকসহ ফুটপাতজুড়ে বসে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে সবার।
কনস্টেবল পদে চাকরিপ্রত্যাশী এসব ছেলেমেয়েদের সাথে রাত জেগে ছিলেন তাদের অভিভাবকরাও। সবার চোখ-কান খোলা, কখন আসবে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল। অবশেষে সব উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে ভোর সাড়ে চারটার দিকে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় নিয়োগ কমিটির সদস্য ও রংপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত প্রার্থী ও অভিভাবকরা যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ১২০ টাকায় বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় নির্বাচিত প্রার্থীরা অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আনন্দে কান্না করেন।
সিহাবুজ্জামান শাওন নামে এক প্রার্থী বলেন, আমার বাবা গরীব কৃষক। অনেকেই বলেছিলেন টাকা ছাড়া চাকরি হবে না, কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। বাংলাদেশ পুলিশের কল্যাণে মাত্র ১২০ টাকায় আমার মতো গরীব কৃষকের ছেলের চাকরি হয়েছে।
অপর এক প্রার্থী বলেন, আজ ভাইভা দেওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিল আমি টিকব। আমার লিখিত পরীক্ষাও ভালো হয়েছিল। তবে অনেকের কাছে নানারকম গুজব শুনে ভয় পেয়েছিলাম আমার হবে কি না। কিন্তু আজ রেজাল্ট পেয়ে আমার সব শঙ্কা দূর হয়েছে। টাকা আর তদবির ছাড়া যে সরকারি চাকরি হয়, বাংলাদেশ পুলিশ তার প্রমাণ।
বাদ পড়া প্রার্থীদের একজন বলেন, টিকতে না পারায় খারাপ লাগছে। কিন্তু যে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে, তাতে আর আক্ষেপ নেই। এভাবেই যদি সব চাকরির নিয়োগ হয় তবে প্রার্থীদের আর দালাল বা প্রতারকদের খপ্পরে পড়তে হবে না। চাকরি পেতে টাকা বা তদবির লাগবে না।
বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য রংপুর জেলার ৮০টি আসনের বিপরীতে প্রায় দুই হাজার ৮০০ প্রার্থী অনলাইনে আবেদন করেন। এবারের নিয়োগ পরীক্ষা ৩টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।
আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রার্থীরা প্রথম ধাপে গত ১২ থেকে ১৪ মার্চ শারীরিক যোগ্যতা যাচাই ও মাঠ পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে সেখান থেকে ৬৭৫ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় ধাপে গত ২০ মার্চ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। সেখান থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে লিখিত পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নের পর ২৫৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।
পরবর্তীতে তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে গত ২৯ মার্চ ২৫৯ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার মাধ্যমে সার্বিক মূল্যায়নে সাধারণ ও বিভিন্ন কোটায় ৮০ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়।