সিএনএম প্রতিনিধিঃ
লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মধ্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্পিডবোটের মালিক চান মিয়া ওরফে চান্দু মোল্লা ওরফে চান্দু যাত্রী পারাপার করার নির্দেশ দেন। মাওয়া ঘাটে দুর্ঘটনা কবলিত স্পিডবোটসহ তার মালিকানাধীন তিনটি স্পিডবোটের একটিরও বৈধ কোনো কাগজপত্র বা অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (৯ মে) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গত ৩ মে মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে নোঙরে থাকা বালুবোঝাই বাল্কহেডের ওপর আছড়ে পড়ে দুর্ঘটনায় ২৬ জন যাত্রী নিহত হয়। এই ঘটনায় ৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় ৪ মে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে রোববার (৯ মে) প্রথম প্রহরে ২টা ৩০ মিনিটের দিকে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানাধীন তেঘড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারে উল্লিখিত ২ নম্বর আসামি স্পিডবোট মালিক চান মিয়া ওরফে চান্দু মোল্লা ওরফে চান্দুকে (৪০) গ্রেফতার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় চান মিয়া ওরফে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছিলেন। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চান্দু বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার শিকার ওই স্পিডবোটের ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়েছিল। এছাড়া স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাদির ঘাটতি ছিল।
গ্রেফতারকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরও জেনেছি- অতিরিক্ত মুনাফার লোভে তারা অবৈধভাবে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছিল এবং ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট পারাপার করার বিষয়ে যাত্রীদেরও উৎসাহ ছিল।
তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি- আসামি চান মিয়া ওরফে চান্দু পাঁচ বছর ধরে স্পিডবোটের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের ব্যবসা করে আসছিল। তার তিনটি স্পিডবোটের কোনোটির অনুমোদন ছিল না। দুর্ঘটনার পরপরই আসামি চান্দু আত্মগোপনে চলে যান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, এ মামলায় চারজন আসামি। প্রধান আসামি চালক পুলিশের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একজন ইজারাদার ও আরেকজন আসামিসহ মামলার বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছেন বলে তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অবৈধভাবে যারা স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাওয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট স্পিডবোট ব্যবসা পরিচালিত হয় তা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিআইডব্লিটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, জেলা প্রশাসক, ঘাট ইজারাদার ও মালিক সমিতির তত্ত্বাবধায়নে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে অবশ্যই যদি দেখে কোনো অনুমোদনহীন বোট নদী পারাপার করছে তাহলে অবশ্যই আমরা যাত্রীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনকে লুকিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করতেন। সাধারণ সময়ে তারা যাত্রী পারাপারের দেড়শ টাকা করে নিলেও সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের সময় তারা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত।
স্পিডবোটটিতে ২০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও দুর্ঘটনায় আমরা দেখেছি ৩২ জন যাত্রী ছিল। তবে এক্ষেত্রে ঘাট ইজারাদার ও ঘাট মালিক সমিতির গাফিলতি লক্ষ করা যায় বলে জানান তিনি।