সিএনএম:
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে চার বছরের শিশু সালমানকে অপহরণের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। অপহরণকারীরা সালমানকে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। অপহৃতের বাবা মওলানা ইমদাদুল্লা হজে থাকায় অভিযুক্তরা এ সুযোগ কাজে লাগায়। অপহরণের পর ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।
গ্রেফতার দুইজন হলো মো. শাফায়েত হোসেন আবির ও মো. আল আমিন। এ ঘটনায় জড়িত আরও দুইজনের নাম পাওয়া গেছে এবং তারা হলো হেলাল ও আইয়ুব।
১৫ জুলাই মমিনবাগ এলাকা থেকে ট্রেন দেখানোর কথা বলে সালমানকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে যায় তিন অপহরণকারী। পরদিন (১৬ জুলাই) অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তি অপহৃতের পরিবারকে ফোন করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সালমানের পরিবার স্থানীয় থানা পুলিশ ও র্যাব-১০-কে অবহিত করে বিষয়টি। পরবর্তীতে র্যাব চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেফতার করে। এসময় অপর দুইজন পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, চার বছরের শিশু অপহরণ ও মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় অপহৃত শিশুকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করে র্যাব-১০। চক্রটির মূলহোতা শাফায়েত হোসেন আবির ও আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কমান্ডার মঈন বলেন, গতরাতে র্যাব-৭ ও ১০ এর একটি দল চট্টগ্রামের সদরঘাট আইস ফ্যাক্টরি রোড এলাকায় যৌথভাবে অভিযান চালায়। সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয। গ্রেফতার শাফায়েত ও আল আমিন শিশু সালমানের পাশের বাসার ভাড়াটিয়া ছিল। তিন মাস আগে সালমানকে বাসার সামনে খেলাধুলার সময় তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তারা। শিশুটির বাবা হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছিল, এই সময়টাকে বেছে নেয় অপহরণকারীরা।
তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী, আল আমিন শিশু সালমানকে বিভিন্ন সময়ে চিপস, চকলেট, খেলনা কিনে দিয়ে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। গত ১৫ জুলাই শিশুটিকে বাসার সামনে থেকে আল আমিন তাকে অপহরণ করে কামরাঙ্গীরচরের মাদবর বাজার এলাকায় তার অপর এক সহযোগী হেলালের কাছে নিয়ে যায়। হেলাল শিশু সালমানকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায় এবং শাফায়েত ও আল আমিনকে চট্টগ্রামে যেতে বলে। চট্টগ্রামে গিয়ে হেলালের পরিচিত আইয়ুবের বাসায় সালমানকে রাখা হয়। পরে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসময় ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। শিশুটির পরিবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারীদের ৫ হাজার টাকাও দেয়।
একপর্যায়ে অপহরণকারীরা পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সালমানকে ফেরত দিতে রাজি হয়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় যেতে বলে তারা। ভুক্তভোগীর পরিবারটি তাদেরকে আশ্বস্ত করে, তারা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছে এবং শিশুটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিশুটির পরিবার মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আসতে দেরি করায় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে আল আমিন এবং শাফায়েত সালমানকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনযোগে ফেনী-চট্টগ্রাম যাতায়াত করে। শাফায়েত ও আল আমিন শিশু সালমানকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আইয়ুবের কাছে রেখে মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার জন্য নিউ মার্কেট এলাকায় যায়। পরে র্যাব তাদের গ্রেফতার করে।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শিশুটিকে নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পৌঁছালে আইয়ুব র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়।
ট্রেনে ঘুরে ঘুরে কেন অপহরণ ফাঁদ পাতা হয়েছিল এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এক জায়গায় বসে মুক্তিপণ চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সহজে শনাক্ত করে ফেলতে পারে। এ জন্য তারা একেক সময় একেক ট্রেনে ঘুরে ঘুরে অপহরণের টাকা দাবি করছিল। তারা অভিনব পন্থা অবলম্বন করছিল, তবে র্যাব তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।