মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০২:০৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
"ফটো সাংবাদিক আবশ্যক" দেশের প্রতিটি থানা পর্যায়ে "ক্রাইম নিউজ মিডিয়া" সংবাদ সংস্থায় ১জন রিপোর্টার ও ১জন ফটো সাংবাদিক আবশ্যক। আগ্রহী প্রার্থীরা  যোগাযোগ করুন। ইমেইলঃ cnm24bd@gmail.com ০১৯১১৪০০০৯৫
সংবাদ শিরোনাম ::

বেতন ৩৩ হাজার, মালিক শতকোটি টাকার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১০.২৮ এএম
  • ১৩৪ বার পড়া হয়েছে

নিটল মটরস’র কর্মচারী আরফানের
হাতে আলাদীনের চেরাগ
* বেতন ৩৩ হাজার, মালিক শতকোটি টাকার

সিএনএম প্রতিবেদক

দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি স্বনামধন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিটল মোটরস কোম্পানি। এই কোম্পানিতে তৃতীয় শ্রেণির চাকরি নিয়ে এখন রীতিমতো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন কর্মচারী মো. আরফান আলী। অভিযোগ উঠেছে, একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও বিগত শেখ হাসিনার সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে চলেছেন। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন, আলিশান বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অঢেল সম্পত্তি। তবে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে চলায় দুদক তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। দেশের পট পরিবর্তনে এখন দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন তিনি। তার জুলুম-নিপীড়নে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। তার অপকর্মের ফিরিস্তিসহ অঢেল সম্পত্তি গড়ে তোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুদককে অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগোন ইউনিয়নের কুড়িপাড়া মধুরটেকি নিবাসী মৃত কোরবান আলীর ছেলে মো. আরফান আলী। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ২০০০ সালে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি স্বনামধন্য বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিটল মোটরস এ তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে যোগদান করেন। অনেক লবিং করে চলে তার কর্মময় জীবন। চাকরির শুরুতেই তিনি প্রতিষ্ঠানটির গাজীপুরের কোনাবাড়ি শাখায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর নানা কৌশলে তিনি প্রধান কার্যালয়সহ শাখা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি হিসেবে ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে বদলি হয়ে যশোরের বেনাপোল বন্দর শাখায় চলে যান। সেখানে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সেখানে কর্মজীবনে সব মিলিয়ে মাসিক বেতন পান মাত্র ৩৩ হাজার টাকা। চাকরির সুবাদে তার চোখ উঠে যায় কপালে। নিজ এলাকায় নিজেকে মেলে ধরেন প্রতিষ্ঠিত একজন কর্মকর্তা ও অঢেল সম্পত্তির মালিক হিসেবে। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে স্থানীয় ইউপি মেম্বার থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিজয়ী করে উল্লাস করতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ভুড়িভোঁজে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি এমনকি সরকারি কর্মকর্তাও অতিথি হিসেবে উপস্থিত রেখে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করাতেন।

স্থানীয়রা জানায়, মাসিক ৩৩ হাজার টাকা বেতন পেয়ে যেখানে সংসার চালানোই কঠিন, সেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানির তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি হয়ে মো. আরফান আলী এখন আলাদীনের চেরাগ বনে গেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নিজ প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতেন আরফান আলী। ইতোমধ্যেই রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ায় তার সম্পত্তির একটি বিবরণ তুলে ধরে দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি আরফান আলীর আয়ের উৎস খতিয়ে দেখতে দুদককে অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আরফান আলী তার এক ছেলেকে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করেছেন। আরেক মেয়েকে বিপুল স্বর্ণালঙ্কার প্রদানসহ কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ধুমধামে বিয়েও দিয়েছেন। যা উপজেলায় নজিরবিহীন।

সূত্র আরও জানায়, নিজগ্রাম কুড়িপাড়া মধুরটেকিতে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশান বাড়ি তৈরি করেন আরফান আলী। কুড়িপাড়া প্রাইমারি স্কুলের পাশে মাঠের পূর্বপাশে ৫ শতাংশ জমির উপর ২ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা ভবন রয়েছে তার। এছাড়া ওই ভবনের দক্ষিণপাশে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণ করেছেন আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল। কুড়িপাড়ার উত্তরপাড়া লালটেকিতে প্রায় দেড় কোটি টাকায় ১১৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন তিনি। কুড়িপাড়া মধুরটেকি নদীর পাড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ শতাংশ জমি ও বহুতল একটি ভবন নির্মাণের জন্য ফাউন্ডেশন করা হয়েছে। একই এলাকার নবীনপাড়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকায় ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এছাড়া নিজ বাড়ির পূর্বে প্রায় ২৫ লাখ টাকায় ৩৫-৪০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এছাড়াও গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আফাজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ৮-১০ শতাংশ জমি কিনেছেন আরফান আলী। গাজীপুরের চন্দ্রা কালামপুর রেলস্টেশনের উত্তরে একটি ফ্যাক্টরির সামনে রাস্তার পশ্চিম পাশে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমি রয়েছে তার। এছাড়া কালিয়াকৈর, সফিপুর, সিনাবহ, ছুরিচালা, বাগামবহসহ তার নিজ শশুরালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেন আরফান আলী। এভাবে টাঙ্গাইল-গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আরফান আলী নামে-বেনামে সম্পত্তি গড়ে এখন শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আরফান আলীর সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য বা সাক্ষাৎ মেলেনি।

দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্নীতি সংক্রান্তে তাদের দপ্তরে অভিযোগ জমা দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে তা যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধান চালানো হয়। এক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে, তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2015-2025
Theme Developed BY ThemesBazar.Com