ঢাকা শহরের ব্যস্ততম এলাকা যাত্রাবাড়ীতে এক ভয়ঙ্কর অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মোঃ শামসুদ্দিন (৫৯), যিনি মালয়েশিয়ায় কাজের সুবাদে এক ভয়ঙ্কর নারী পাচার চক্রের সদস্যদের চিনতে পেরেছিলেন। চক্রটির অপরাধ সম্পর্কে অবগত হওয়ায় প্রতিশোধ নিতে তারা শামসুদ্দিনকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।কীভাবে ঘটল ঘটনাটি?
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সকাল ১০:৩০ মিনিটের দিকে শামসুদ্দিনকে ফোন করে জানানো হয় যে, তার ব্যবসার জন্য নতুন অর্ডার আছে এবং তা নিতে তাকে যাত্রাবাড়ীর সামাদ সুপার মার্কেটের সামনে আসতে হবে। অর্ডারের আশায় তিনি সেখানে পৌঁছালে পূর্বপরিচিত শাহিন মাতব্বর (৫৫) ও তার সহযোগীরা তার গতিরোধ করে। তাকে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে টেনে নিয়ে গিয়ে ভয়ঙ্করভাবে মারধর করা হয়। এরপর গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৩০,০০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ইলেকট্রিক শক দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চরম নির্যাতন চালানো হয়।
নারী পাচার চক্রের প্রতিশোধ!
শামসুদ্দিন মালয়েশিয়ায় থাকার সময় জানতে পারেন যে, শাহিন মাতব্বর, বিল্লাল ও তাদের চক্র নারী পাচারকারী দলের সক্রিয় সদস্য। তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন নারীকে গার্মেন্টসের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যেত এবং পরে তাদের হোটেল ও ফ্ল্যাট—এ আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করত। এই ভয়াবহ অপরাধের প্রতিবাদ করায় শামসুদ্দিন তাদের টার্গেটে পরিণত হন। তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে শাহিন মাতব্বরের নেতৃত্বে দলটি এই পরিকল্পিত অপহরণ ও নির্যাতন চালায়।
মুক্তিপণের জন্য দ্বিতীয় দফা অপহরণ!
প্রথম দফার নি নির্যাতনের পর ঘটনাস্থলে ভিড় জমে গেলে স্থানীয় পথচারী মোঃ মোস্তফা ৯৯৯—এ ফোন করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি।
শামসুদ্দিন যখন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন, তখন ফের তার পথরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। এরপর চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় মান্ডা এলাকায় একটি নির্মানাধীন ভবনে, যেখানে ফের শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন ।
তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক কয়েকটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়।
পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর ভুক্তভোগী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। যাত্রাবাড়ী থানা মুগদা থানায় পাঠিয়ে দেয়, আবার মুগদা থানা যাত্রাবাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। এতে ভুক্তভোগী চরম হয়রানির শিকার হন।
এখন কী হবে?
এই ঘটনা একদিকে যেমন নারী পাচার চক্রের ভয়াবহতা উন্মোচন করেছে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। শামসুদ্দিন এখন বিচার চাইছেন এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীর আবেদন
তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন দ্রুত এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। ভোক্তভোগী ক্রাইম নিউজ মিডিয়াকে জানান যে, যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে ভোক্তভোগী একটি এজাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবকিছু জানার পরও এ বিষয়ে অদ্য পর্যন্ত কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোন ফোন করে তা না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।