সিএনএম প্রতিনিধিঃ
ভারতের এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কিশোরী ফাতেমার। সেই সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ফাতেমা যুবকের সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে।যুবকের শলা-পরামর্শে একপর্যায়ে ওই যুবকের হাত ধরে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফাতেমা।
এ ঘটনা দীর্ঘ ১০ বছর আগে নিত্তদিনের পন্যের মত অনেক হাতবদল হয়েছেন ফাতেমা! যাকে বিশ্বাস করে দেশ-গ্রাম ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, সেই প্রেমিক রূপের ‘প্রতারক’ ফাতেমাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন
সেখানকার এক এজেন্ট-এর কাছে ।
দুঃসহ, দুর্বিষহ এক দশক কাটিয়ে অবশেষে ভারত থেকে সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন ফাতেমা। শুধু এ তরুণীই নন, আজ বৃহস্পতিবার ভারত থেকে ফিরেছেন আরও ১৮ জন। তাদের সবাই দেশটির পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ছিলেন কারাগারে। এদের মধ্যে ৫ জন নারী, বাকিরা পুরুষ।
ফাতেমার বাড়ি চাঁদপুরে। আজ দুপুরে সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশের পর নিজের করুণ কাহিনী শোনান ফাতেমা।
তিনি জানান, ভারতের এক যুবকের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তারা ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু সেখানে স্বপ্নের বৃক্ষ ডালপালা ছড়ানোর আগেই বিনষ্ট হয়ে যায় অঙ্কুরেই।
ফাতেমা বলেন, ‘আমার সাথে প্রেম করে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিল সে (ভারতের যুবক)। কিন্তু ভারতে নিয়ে সে আমাকে বিক্রি করে দেয়।’
এরপরের কাহিনী দুঃসহ বাতাসভারী হয়ে যাওয়ার মতো এক জীবনে হাজারও স্বপ্নের হাতছানি হয়ে একহাত থেকে অন্যহাত এর পালা বদল শেষে ঘুরতে থাকে নানা অজানা ও অচেনার পথে। ফাতেমার জীবনচাকা শেষ অবধি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ঠাঁই হয় কারাগারে। এরপর শুধু দেশে ফেরার দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
বিজিবির বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্ণেল গাজী শহীদুল্লাহ জানান, বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ ৫ জন নারীসহ ১৯ বাংলাদেশি নাগরিককে বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে শেওলা শুল্ক স্টেশনে দায়িত্বরত্ব মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কোনো করোনা উপসর্গ না পাওয়ায় এবং করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল থাকায় তাদেরকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়ে আত্মীয়স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক তৎপরতায় আসামের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনারের সার্বিক সহযোগিতায় বিজিবি বিএসএফ কর্তৃপক্ষ, ভারতের আসাম পুলিশ কর্তৃপক্ষ ও আসাম রাজ্য সরকারের চিফ সেক্রেটারির সাথে যোগাযোগ করে ওই ১৯ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এছাড়া গত ২২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর আসামের গৌহাটিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আসাম রাজ্য সরকারের সহযোগিতার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল।