নগদ অর্থ-সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিদেশ থেকে কয়লা অথবা প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে না পারায় বাসা-বাড়ি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় গত মাসে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার দাম রেকর্ডে বেড়ে যায়। যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিকে বৈশ্বিক বাজার থেকে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে।
এক বছর আগের তুলনায় গত ৯ মাসের মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে জ্বালানির ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানির ব্যয় বহনের সক্ষমতাও হারিয়েছে দেশটি।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল এক টুইটে বলেছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে প্রায় সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের অপর একটি কেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে।
করাচির বৈদ্যুতিক গবেষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান আরিফ হাবিব লিমিটেডের প্রধান তাহির আব্বাসের মতে, দেশটির বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় এক পঞ্চমাংশের সমান বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ওই দুই কেন্দ্রে।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ইতোমধ্যে যে কঠিন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, সেটিকে আরও জটিল করে তুলেছে বিদ্যুতের এই সঙ্কট। গত সপ্তাহে সংসদের অনাস্থা ভোটে ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসা শেহবাজ এখনও দেশটিতে জ্বালানি মন্ত্রী নিযুক্ত করেননি।
দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র এই দেশটি জ্বালানি আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের এলএনজি সরবরাহকারীরা গত কয়েক মাসে সরবরাহের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি চালান বাতিল এবং সরবরাহ ব্যবস্থা আরও কঠিন করেছে।
রোববার স্পট মার্কেট থেকে ছয়টি এলএনজি কারগো কেনার জন্য একটি দরপত্র প্রকাশ করেছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে দেশটির সরকারকে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হতে পারে।
পাকিস্তান কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির গবেষণা প্রধান সামিউল্লাহ তারিক বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত থাকায় কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে না। বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলায় দেশটির সরকার সরবরাহ কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ।