ইরানের বিরুদ্ধে ‘সামান্যতম পদক্ষেপ’ নেওয়া হলেও ইসরায়েলের প্রাণকেন্দ্রে পাল্টা আঘাত হানা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সোমবার ইরানের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কুচকাওয়াজে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রাগার ইসরায়েলে রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়। দেশটি বলেছে, ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা হলে তা মানবে না ইসরায়েল। এমনকি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নেওয়ারও হুমকি দিয়ে রেখেছে এই ইহুদি রাষ্ট্র।
ইরানের জাতীয় সশস্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেন, ‘ইহুদি রাষ্ট্র, আপনাদের জেনে রাখা উচিত…আপনারা যদি আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সামান্যতম পদক্ষেপও গ্রহণ করেন, তাহলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জায়নবাদী রাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু বানাবে।’
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কুচকাওয়াজ দেখেছেন রাইসি। এ সময় সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার মাথার উপর চক্কর দেয় এবং প্যারাসুট ব্যবহার করে ইসলামি এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির সমাধির কাছের প্যারেড এলাকায় অবতরণ করেন সৈন্যরা।
২০১৫ সালে ইরানের সাথে বিশ্ব শক্তির দেশগুলোর যে পারমাণবিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল, ২০১৮ সালে সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন করে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
পরে দেশটির ক্ষমতায় আসা নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেন। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে ইরানের সাথে পরোক্ষভাবে আলোচনা অব্যাহত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সকে মার্কিন কালো তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার তেহরানের দাবি ঘিরে গত মাসে এই আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান পরমাণু কর্মসূচি চুক্তির সীমা লঙ্ঘন করে প্রতিক্রিয়া জানায়। চুক্তি অনুযায়ী, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তির বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার কথা ছিল ইরানের।
এর আগে, পরমাণবিক কর্মসূচির সাথে যুক্ত স্থাপনায় ইসরায়েল কয়েকটি হামলা এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে ইরান। তবে ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার অথবা নিশ্চিত করেনি। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কখনই রাষ্ট্র হিসেবে মনে করে না ইরান। ইসরায়েল বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেবে না তেলআবিব।
সোমবার তেহরানে ইরানের সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজে ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান, মনুষ্যবিহীন নজরদারি বিমান এবং ছোট ছোট সাবমেরিন প্রদর্শন করা হয়।
রাইসি বলেছেন, ‘আমাদের কৌশল হলো আত্মরক্ষা করা, আক্রমণ নয়। ইরানের সেনাবাহিনী নিষেধাজ্ঞার সুযোগকে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের সামরিক শক্তি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।’
সূত্র: রয়টার্স।