যশোর, নেত্রকোনা ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসকদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এসব ঘটনা জানা যায়।
মঙ্গলবার যশোর ডিসির দাফতরিক মোবাইল নম্বর ক্লোন করার অভিযোগ উঠেছে। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত দাফতরিক ওই নম্বরে কোনো চাঁদাবাজি বা প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে যশোরের সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
এদিকে জেলার প্রধান এই সরকারি কর্মকর্তার নম্বর ক্লোন হওয়ার খবরে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। তারা বলছেন, জেলা প্রশাসকও রক্ষা পাচ্ছেনা প্রতারক চক্রের কাছ থেকে। যেকোনো মূল্যে এসমস্ত চক্রের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের অফিশিয়াল ফেজবুক ও পেজে একটি সতর্কমূলক স্ট্যাটাসে জানানো হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা প্রশাসক যশোরের দাফতরিক মোবাইল নম্বর ০১৭১৩৪১১৩৭১ ক্লোনের মাধ্যমে একটি চক্র জেলার বেশ কয়েকটি ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফোন করছে। এ ক্ষেত্রে একটু খেয়াল করে দেখবেন নম্বরটি +৬৮৮০১৭১৩৪১১৩৭১ এ রকমের অর্থাৎ ‘+৮৮’-এর আগে কোনো একটি সংখ্যা তারা ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো এবং কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন না করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হলো।
যশোর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা প্রশাসকের দাফতরিক নম্বর থেকে কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের নম্বরে ফোন দেওয়া হয়েছে। তবে কোথাও কোনো প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে সতর্কতার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড হ্যাক করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশ নম্বরে চাঁদা দাবি করেছে একটি হ্যাকার গ্রুপ। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির জহির উদ্দীন বাদী হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টার সময় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জিডিতে জহির উদ্দীন উল্লেখ করেছেন, ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পৌনে ৭টার সময় জেলা প্রশাসকের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নম্বর ০১৭০৮-৪১০০০০ থেকে জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক মোমিন হোসেনের ব্যবহৃত ০১৭১৬-৫৫৫১৩২ নম্বরে দুই হাজার টাকা ০১৯৪৪-০৬৩৯৭৫ নম্বরে বিকাশ করতে বলেন। গাড়িচালক জেলা প্রশাসক ভেবে দুই হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর হ্যাকার গ্রুপ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত আরও কয়েকটি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে দুই হাজার টাকা দেওয়ার জন্য বলে।
রাতে মোমিন হোসেন জেলা প্রশাসককে টাকা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান তাকে বলেন, আমি তো তোমাকে টাকা পাঠাতে বলিনি। পরে তিনি বুঝতে পারেন যে নম্বর ক্লোন করা হয়েছে। রাতেই এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকারকে খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। খুব শিগগির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে।
অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক মোবাইল নম্বরটি ক্লোন করা হয়েছে। একটি প্রতারক চক্র তার ব্যবহৃত ০১৭১৫১২৩১২৮ নম্বরটি ক্লোন করেছে।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘একটি জরুরি সতর্কতামূলক বার্তা’ পোস্ট করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফেসবুক বার্তায় তিনি লিখেন, ‘জেলা প্রশাসক, নেত্রকোনার ব্যক্তিগত ও দাফতরিক মোবাইল নম্বর ০১৭১৫১২৩১২৮ নম্বর ক্লোন করে বিভ্রান্তিমূলকভাবে একটি প্রতারক চক্রের দ্বারা বিভিন্নজনের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কোনো প্রকার আলাপ ও অর্থ লেনদেন না করার জন্য সবাইকে সতর্ক করা হলো। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করা হচ্ছে।’