চন্দ্র শেখর পেশায় মিস্ত্রি। তবে নিজের নাম বলতেন শেখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিফ কম্পট্রোলার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে নিজের পরিচয় দিতেন। এসব পরিচয় দিয়ে বিভিন্নজনকে তদবির করার আশ্বাস দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন মিস্ত্রি চন্দ্র শেখর।
এসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) তেজগাঁও থানার নাজনীনবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে চাকরিপ্রার্থীর সিভি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বদলির আবেদন, সরকারি স্কুল-কলেজের ভর্তির আবেদন, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম, মোবাইল নম্বর, একাধিক সিল, ছয়টি মোবাইল ফোন, চারটি ডেবিট কার্ড ও বিভিন্ন ব্যাংকের চেক জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে শ্যামলীতে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার চন্দ্র শেখর মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আশ্বাস দিয়ে মানুষজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এছাড়া স্কুল-কলেজে ভর্তি ও বদলি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো, গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ পাস ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে শতাধিক লোকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
ডিসি বিপ্লব বলেন, সর্বশেষ গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিফ কম্পট্রোলার পরিচয়ে চন্দ্র শেখর মিস্ত্রি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন করে একজন ছাত্রকে ভর্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতারক চন্দ্র শেখর মিস্ত্রি যখন মোবাইল ফোনে নিজেকে যেই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন, তার আগে থেকে ওই কর্মকর্তার কণ্ঠ নকল করার প্র্যাকটিস করে অবিকল তার মতো করে কথা বলতেন। তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পর্যালোচনা করে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। চন্দ্র শেখর ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে তেজগাঁও থানায় গ্রেপ্তার হয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তার সঙ্গে এ প্রতারণার কাজে আর কারা-কারা জড়িত তা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে। এখন পর্যন্ত চন্দ্র শেখর শতাধিক লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে জানা গেছে।