ইউরোপের দেশ নরওয়েতে পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবানের সদস্যরা। রোববার (২৩ জানুয়ারি) নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এই আলোচনা শুরু হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর ইউরোপে তালেবান গোষ্ঠীর এটিই প্রথম কোনো আলোচনা।
ভারপ্রাপ্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকীর নেতৃত্বে তালেবানের একটি প্রতিনিধিদল তিনদিনব্যাপী এই বৈঠকে অংশ নিয়েছে। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। আলোচনাটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন আফগানিস্তানে মানবিক পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হয়ে চলেছে।
তালেবান প্রতিনিধি দলের অংশ সাইফুল্লাহ আজম বার্তাসংস্থা এপি’কে জানিয়েছেন, ‘আফগানিস্তানের আটকে রাখা সম্পদ ছেড়ে দিতে আমরা তাদেরকে অনুরোধ করছি। একইসঙ্গে রাজনৈতিক কারণে সাধারণ আফগানদের শাস্তি না দেওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষ প্রচন্ড শীতে কষ্ট পাচ্ছে, অভুক্ত রয়েছে। আমি মনে করি, সংকটপীড়িত আফগানদের পাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাঁড়ানোর এটিই সবচেয়ে ভালো সময়। নিজেদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ আফগানরা যেন শাস্তি না পায়।’
সংবাদমাধ্যম বলছে, নরওয়ের রাজধানী অসলোর তুষারাবৃত পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত একটি হোটেলে এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকের প্রথম দিনে তালেবান প্রতিনিধি দলের সাথে আফগানিস্তান ও আফগান বংশোদ্ভূত নারী অধিকার ও মানবাধিকার কর্মীদের সাক্ষাৎ হবে।
এই বৈঠকের আগে তালেবানের সংস্কৃতি ও তথ্যবিষয়ক উপমন্ত্রী টুইটারে একটি ভয়েস বার্তা টুইট করেন। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকীর পক্ষ থেকে পাঠানো বার্তা বলে দাবি করে সেখানে তিনি ‘অর্জনে পরিপূর্ণ একটি ভালো সফরের’ আশা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে নরওয়েকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, দেশটি ‘ইউরোপের সাথে একটি ইতিবাচক সম্পর্কের দুয়ার হয়ে উঠবে’।
গত বছরের আগস্ট মাসে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই সফরেই প্রথমবারের মতো তাদের প্রতিনিধিদল ইউরোপে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। এর আগে তালেবান প্রতিনিধিরা রাশিয়া, ইরান, কাতার, পাকিস্তান, চীন ও তুর্কমেনিস্তানে সফর করেছেন।
এদিকে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম ওয়েস্টের নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল তালেবানের সঙ্গে এই আলোচনায় অংশ নেবে। সেখানে তারা ‘একটি প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন, উদ্ভূত জরুরি মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটে প্রতিক্রিয়া, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী উদ্বেগ এবং মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাসহ মানবাধিকার’ বিষয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ড জানান, তালেবান প্রতিনিধি দল তাদের দেশে সফরে আসলেও সেটি আসলে তাদেরকে বৈধতা বা স্বীকৃতি দেওয়া নয়। কিন্তু যারা বর্তমানে আফগানিস্তান শাসন করছে, আমাদের অবশ্যই তাদের সাথে কথা বলতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এছাড়া তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই বিদেশি সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল আফগানিস্তানের অর্থনীতি। আগস্ট থেকে সেই সহায়তা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ও মানবিক সংকট কেবলই বেড়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, আফগানিস্তানের ৯৫ শতাংশ মানুষের কাছে খাওয়ার মতো যথেষ্ট খাবার নেই। এছাড়া ক্ষুধার কারণে আফগান জনগোষ্ঠীর ৫৫ শতাংশ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।