সিএনএম প্রতিনিধিঃ
বরগুনার তালতলী উপজেলার গোড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিধবা জবেদা বেগম (৭৩)। দুই ছেলের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী। কোনো কাজই করতে পারেন না তিনি। বিয়ে করে আরেক ছেলে থাকেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। খোঁজ নেননা বৃদ্ধা মায়ের। অর্থাভাবে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে জবেদা বেগমকে।
বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে গত ১১ বছর ধরে ঘুরছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। হতদরিদ্র এই বৃদ্ধার কাছেও টাকা দাবি করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। টাকা দিতে না পারায় বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম উঠেনি বৃদ্ধ জবেদা বেগমের। পরে রোববার মাত্র দুই মিনিটে এই বৃদ্ধার নাম বয়স্ক ভাতার তালিকায় তুলে দিয়েছেন তালতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওসার হোসেন।
এ ঘটনা নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন ইউএনও কাওসার হোসেন। মুহূর্তেই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ায় প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও কাওসার।
ফেসবুক পোস্টে কাওসার হোসেন লিখেন, জবেদা বেগম গতকাল এক হাতে ঝুলি অন্য হাতে লাঠি ভর দিয়ে আমার কাছে আসেন। খুব ধীরস্থিরভাবে ঝুলি থেকে ১৬ টাকা বের করে টেবিলে রাখলেন। তার একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড চাই। মেম্বার-চেয়ারম্যান ৫/১০ হাজার টাকা চায়। দিতে পারেন না, তাই গত ১১ বছর বিভিন্নজনের হাতে পায়ে ধরেও কার্ড পাননি। আমি যেন ১৬ টাকায় তার কার্ডটা করে দিই এটাই উনার চাওয়া। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, উনি নিতান্ত গরিব, বিধবা। এক ছেলে কর্ম অক্ষম, অন্য ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। তিনি প্রায়ই অভুক্ত থাকেন, আজও না খেয়ে আসছেন।
তিনি আরও লিখেন, তাকে সামনে রেখেই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে উনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিলাম। দুই মিনিটের মধ্যে উনার নাম বয়স্ক ভাতার এমআইএসে এন্ট্রি হল। আজ এসেছেন বয়স্ক ভাতার কার্ড নিতে। কার্ড হাতে পেয়ে হেসেছেন আবার কেঁদেছেন। দুঃখী মানুষের হাসি মনে হয় সবচেয়ে সুন্দর হয়। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে এলোমেলো শব্দে দোয়া করেছেন যেন আল্লাহ আমাকে আরও বড় করেন। তখন থেকে ভাবছি, ইশ যদি এই দোয়াটা না করে আমাকে আল্লাহ যেন ক্ষমা করে দেন এই দোয়াটা করতেন। বড় হয়ে কী লাভ? বড় হতে চাই না, ক্ষমাপ্রাপ্ত হতে চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অফিসে উপজেলার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন তিনি আমার কক্ষে প্রবেশ করে তার পুটলি থেকে ১৬ টাকা বের করে আমার টেবিলে রাখেন। এই টাকার বিনিময়ে তিনি আমাকে বয়স্ক ভাতায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে দিতে বলেন।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, তিনি অত্যন্ত অসহায় মানুষ। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার তালিকায় তার নামটি আগে থাকার কথা। অথচ তার নামই নেই। এরপরই আমি আমার দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করি। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য বৃদ্ধার একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টও করে দেওয়া হয়েছে।
বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, ইউএনও কাওসার হোসেন অত্যন্ত প্রসংশনীয় কাজ করেছেন। এ রকম মানবিক ইউএনও না হলে ওই বৃদ্ধা হয়তো আরও ১১ বছর ঘুরেও বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম তুলতে পারতেন না। এ জন্য বরগুনার সকল নাগরিকের পক্ষ থেকে ইউনওকে ধন্যবাদ জানাই।