সিএনএম ডেস্কঃ
ট্রাস্ট ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ও চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হাসনা হেনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং দেশের বাইরে অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পত্তি অর্জন। তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগে উঠে এসেছে অসংখ্য নাম, স্থান, কোম্পানি এবং লেনদেনের বিস্তারিত।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া যায় যায়, এমআর গ্লোবাল লিমিটেড নামে একটি কাগুজে কোম্পানির নামে ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। এই ঋণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ কাগজপত্র বা ক্রেডিট যাচাই ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হয়, যা পরবর্তীতে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব কিছুর পেছনে রয়েছে হাসনা হেনা চৌধুরীর কালো হাত।
এছাড়া, বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস এবং বেভারেজ কোম্পানির নামে ১০০ কোটিরও বেশি টাকার ওভারড্রাফট (ওডি) সুবিধা দিয়ে সেই অর্থকে মানিলন্ডারিং করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অভিযোগ, হাসনা হেনা চৌধুরীর নামে রয়েছে গুলশান, বনানী এবং বারিধারা এলাকায় বেশ কিছু বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তি। এই সম্পত্তি কেনার অর্থ এসেছে ঋণ জালিয়াতি এবং ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অর্থ লুটের মাধ্যমে।
জানা গেছে- তিনি দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন এবং সেসব দেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, এই অর্থ থেকে তার শেয়ারবাজারে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে, যা তার কালো টাকার উৎস প্রকাশ করে। এই বিনিয়োগের ফলে তিনি শেয়ারবাজারে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
বিশেষ করে, তিনি ট্রাস্ট ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়েছেন। তার পছন্দের প্রার্থীদের উচ্চপদে নিয়োগ দিয়ে বড় অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। তার তত্ত্বাবধানে কেবল মাত্র বড় অঙ্কের অর্থ প্রদানকারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ডিফেন্স এডভাইজার জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকীর প্রভাব খাটিয়ে হাসনা হেনা চৌধুরী ট্রাস্ট ব্যাংকে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি তারিক সিদ্দিকীর সাথে সম্পর্কের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন টেন্ডার এবং সরবরাহ চুক্তিতে মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করেছেন।
ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সমস্ত ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আর্থিক খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং গ্রাহকদের আস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।