সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০২:৫২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
"ফটো সাংবাদিক আবশ্যক" দেশের প্রতিটি থানা পর্যায়ে "ক্রাইম নিউজ মিডিয়া" সংবাদ সংস্থায় ১জন রিপোর্টার ও ১জন ফটো সাংবাদিক আবশ্যক। আগ্রহী প্রার্থীরা  যোগাযোগ করুন। ইমেইলঃ cnm24bd@gmail.com ০১৯১১৪০০০৯৫
সংবাদ শিরোনাম ::
লক্ষ্মীপুরে আদালতে আইনজীবী-কর্মচারীদের হাতাহাতি বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৩০, সম্মেলন স্থগিত পুলিশের বাসে বিনামূল্যে ঢাকায় ফিরলেন শতাধিক যাত্রী থানার কাছের দোকান থেকে ২২ লাখ টাকার মোবাইল চুরি নির্বাচন নিয়ে তারেক রহমানের প্রস্তাবে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ীকে হত্যা: আসামিদের ধরার দাবিতে সড়ক অবরোধ ময়মনসিংহে বাস উল্টে হেলপার নিহত, আহত ১৯ মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্ত ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ চোরাই মোটরসাইকেলসহ মেকানিক গ্রেপ্তার ঈদের জামাতে আ’লীগ নেতাকে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের গোলাগুলি/ ভাংচুর-লুটপাট সহ আহত একাধিক

পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে চার সাংবাদিক হত্যার বিচার এর দাবিতে সাধারণ সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধনে

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪, ১.৪৩ এএম
  • ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে চার সাংবাদিক হত্যার বিচার এর দাবিতে সাধারণ সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধনের আয়োজন। 

আলমগীর (সেলিম)

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৪ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন।

এদেরই একজন পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার  হোসনাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্ধা হাসান মেহেদী ওরফে মেহেদী হাসান। যিনি ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়িতে সহিংশতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হন। মেহেদীর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পরেছে পুরো পরিবার। বাবা-মায়ের চিকিৎসা আর দুই কন্যা সন্তানের অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে  অথৈ সাগরে এই সাংবাদিকের পরিবার।

নতুন ঘর তুলে আঙিনায় দাঁড়িয়ে বাবা ও মায়ের সাথে ছবি তুলে কত না স্বপ্ন দেখেছিলেন মেহেদী হাসান ওরফে হাসান মেহেদী। অসুস্থ বাবা-মা এর জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন হতো চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা । বাবামা এর চিকিৎসা আর পরিবারের খরচ, সব কিছুই চলতো হাসান মেহেদীর আয়ে। তবে বুলেটের আঘাতে মেহেদীর পাশপাশি সব কিছুই থমকে গেছে। গত ১৮ জুলাই সংবাদ সংগ্রহের জন্য পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে এক সাধারণ  পরিবারের সন্তান হাসান মেহেদী। ছোট বেলা থেকেই অভাব অনটনে বেড়ে ওঠা মেহেদী ছিলেন পরিবারের সবার প্রিয়। তিন ভাই এর মধ্যে মেহেদী সবার বড়। তাইতো তার প্রতি সবার যেমন বাড়তি ভালোবাসা, তেমনি মেহেদীও ছিলো পরিবারের প্রতি আন্তরিক। মেহেদীর বেড়ে ওঠা এবং তার বিভিন্ন স্মৃতি এখনও কাদায় তার স্বজনদের।

সোমবার বিকেলে পটুয়াখালীর বাউফলে হাসান মেহেদীর বাড়িতে  গিয়ে দেখা যায় বাড়ির উঠানেই হাসান মেহেদীকে দাফন করা হয়েছে। পাকা সড়কের পাশেই দো চালা টিনের ঘর ভেঙ্গে কিছুদিন আগে মেহেদী তৈরী করেছেন আধা পাকা টিনসেট বাড়ি। তবে এ জন্য মেহেদীকে স্থানীয়ও একটি এনজিও থেকে ঋন নিতে হয়েছে। প্রতিমাসে মেহেদী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন। পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে বাবা মাকে ভালো রাখতে মেহেদী ছিলো অপসহীন। তাইতো পরিবারের স্বজনরা এখনও মেহেদীর কথা মনে করে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন।

মেহেদীর খালা মাহিনুর বেগম মেহেদীর স্মৃতি মনে করে কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, ‘ছোট বেলায় মেহেদীর অনেক (চর্ম রোগ) ছিলো। এত ঘাঁ হইছিলো মনে করছি বাবায় বাঁচপে না।কিন্তু বাজানরে আমরা অনেক চেষ্টা কইরা সুস্থ করছি। বরগে হোয়াইয়া রাখতাম, নিম পাতা, কাঁচা হলুদ বাইট্টা গায়ে দেতাম। হেই বাবায় আমার লেহা পড়া কইরা বড় হইছে। সাংবাদিক হইছে, আমরা গর্ব করতাম। বাবায় আমাদের সবার খোঁজ খবর নিতো। আগে দো চালা টিনের ঘর ছিল, হের বাপ- মা’র লইগ্যা বিল্ডিং করছে। বাহের চিকিৎসার লইগ্যা সব সময় ব্যস্ত আছেলে। হের চিন্তা আছেলে কিভাবে মা ,বাপরে একটু সুখে রাকপে।’ এভাবেই কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন মাহিনুর বেগম।

মেহেদীর কবরের পাশেই বলে বিলাপ করছিলো মেহেদীর চাচী রেবা আক্তার।তিনি বলেন ‘মেহেদী দেখতে যেমন উচা লম্বা ছিলো তেমনি সে ছিলো ভদ্র একটা ছেলে। সকালের মন জয় করে চলতো। তার স্বপ্ন ছিলো মেয়ে দুই টাকে ভালো করে মানুষ করবে। বাবা মাকে কিভাবে ভালো রাখা যায় সব সময় সেই চিন্তা থাকতো। ছোট দুই ভাই সহ পরিবারটার হাল ধরে রাখছিলো। তবে সব কিছু শেষ হইয়া গেলো।’

অবুঝ শিশুটি আজও জানে না তার পিতা মৃত্যুবরণ করে তার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন। প্রতিদিনই পিতার অপেক্ষায় পথের দূর প্রান্তে চেয়ে থাকে। প্রায় সময়ই তার মাকে বলে, সবার বাবা প্রতিদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরে আসে আমার বাবা রাস্তায় এত কি কাজ এখনও যে আসে না। আগে তো বাবা এমন করত না এই বলে নানা বায়না ধরে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে হাউ মাউ করে কান্না করে। তার মা শিশুটিকে আজও বলতে পারে নি তার বাবার মৃত্যু হয়েছে।

মেহেদীর সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যা শিশু রয়েছে।স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। মত্যুর পর মেহেদীর পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।

হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমসের হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)  বিটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। এর আগে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টি ফোর, দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক বাংলাদেশের আলোয়, যোগাযোগ প্রতিদিন, আলোর জগৎ, ক্রাইম নিউজ মিডিয়া, 24.কম সহ সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একটি মানবাধিকার সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন সংগঠনের নাম  এইচ, আর, এইচ, এফ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2015-2025
Theme Developed BY ThemesBazar.Com